অনলাইন ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে এসেছে ঈদুল আজহা। যারা পশু কোরবানির করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের জন্য এই দিনে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
মফস্বল এলাকায় করোনাভাইরাস নিয়ে সতর্কতা তুলনা মূলক কম দেখা যায়। আর এই ঈদে পাড়া-প্রতিবেশি, মসজিদের ইমাম, কসাই মিলে অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে কোরবানিতে সামিল হন। সঙ্গে শহর থেকে আসা মানুষগুলোও যুক্ত হবেন। ফলে ঝুঁকিটা সেখানে বাড়বে মারাত্বক হারে।
এই অবস্থায় কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখা যায়; মাংস জীবাণুমুক্ত রাখা যায় সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর সিকদার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. শিবলি নোমানি (এমপিএইচ)।
কোরবানির প্রস্তুতি
নামাজ শেষে যারা জবাই ও মাংসের কাজ করবেন তারা সবাই পরিষ্কার ও নতুন কাপড় পাল্টে পুরানো পোশাক পরে নেন, যাতে পোশাকে রক্ত লেগে নষ্ট হয়ে গেলেও আফসোস না হয়।
তবে এবার তা হবে না। আগের দিনই পুরানো পোশাক ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখতে হবে। সেটা পরেই কাজে নামতে হবে। কোরবানির পশুটিকে বরাবরই গোসল করানো হয় কোরবানির আগে। তবে এবার শুধু দায় সারা নয়। ভালোভাবে সাবান মাখিয়ে রেখে সময় নিয়ে গোসল করাতে হবে। পশুর গায়ে থাকা ভাইরাস ধ্বংস করতে হবে।
ছুরি ও অন্যান্য সরঞ্জাম জীবাণুমুক্ত করে রাখতে হবে। একাজে ভুলেও ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা যাবে না।
সাবান গোলানো পানিতে ডুবিয়ে রাখতে পারেন কিংবা ৩ শতাংশ হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন।
যেকোনো ফার্মেসিতেই পাওয়া যায় হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড, দামেও সস্তা।
তবে দ্রবণে রাসায়নিক উপাদানটির মাত্রা ৩ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না, প্রয়োজনে পানি যোগ করে ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত পাতলা করে নিলেও তা করোনাভাইরাস ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট।
পশু জবাই
কেউ নিজের পশু নিজে কোরবানি করেন। আবার এলাকায় মসজিদের ইমাম এসেও জবাইয়ের কাজটি করে দেন। জবাইয়ে সময় পশুকে ধরার জন্য কয়েকজন মানুষ একত্রিত হন। এই কাজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই যথাসম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেকের মুখেই মাস্ক থাকতে হবে।
দামি মাস্কের প্রয়োজন নেই, কাপড় কিংবা সার্জিকাল মাস্কই দুইটি একসঙ্গে পরে নিতে হবে। হাতে গ্লাভস পরতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যিনি জবাই করবেন তার গ্লাভসটি যেন রাবার, ‘ভিনাইল’ কিংবা ‘ল্যাটেক্স’য়ের তৈরি হয়। এতে জবাই করার সময় ছুরি পিছলে যাওয়া আশঙ্কা কমবে।
পশুর চামড়া খসানোর সময়ও একই গ্লাভস পরতে পারেন।
মনে রাখতে হবে, এই গ্লাভস দিয়ে যদি কোনো কারণে মুখ স্পর্শ করে ফেলেন তাহলে কিন্তু গ্লাভস পরাই বৃথা হয়ে গেল। তাই যেকোনো কারণে মুখ স্পর্শ করতে হলে গ্লাভস খুলে নিয়ে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন। অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার মেখে নিতে হবে।
মাংস কাটা
প্রথমেই যে স্থানে মাংস কাটবেন এবং রাখবেন সেই স্থান পরিষ্কার করে তারপর পলিথিন বিছাতে হবে। পলিথিনটাও জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। এখানেও ব্লিচিং পাউডার নিষিদ্ধ, সাবান পানি কিংবা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করতে হবে।
গ্লাভস পরতে পারেন, তবে তা হতে হবে রাবার, ‘ভিনাইল’ কিংবা ‘ল্যাটেক্স’য়ের তৈরি।
মাংসের স্তুপ জীবাণুমুক্ত করার প্রয়োজন নেই। কারণ মাংস যখন রান্না করবেন, তখন ভাইরাস থাকলে এমনিতেই মারা যাবে।
তবে মাংস কাটা, ধোয়া, রান্না ইত্যাদির আগে ও পরে ভালোভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। কোপানোর কাঠটাও কিন্তু জীবাণু করতে হবে।
এখানেও হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড ব্যবহার করতে পারেন। এটি মাংসে লাগলে মাংস বা আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি হয়না।
মাংস মাপার আগে ওজন মাপার অনুষঙ্গটিও জীবাণুমুক্ত করতে পারেন একই উপাদান দিয়ে।
মাংস সংরক্ষণ
যে পলিথিনের ব্যাগে মাংস রাখবেন সেগুলো জীবাণুমুক্ত হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে, যা দিয়ে জীবাণুমুক্ত করলেন তা যেন আবার পলিথিনের ভেতর জমে না থাকে। তাতে মাংস রেখে পলিথিনের মুখ শক্ত করে বেঁধে বাইরের দিকে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। এতে মাংস যদি ভাইরাস থেকেও যায় তা আপনার ফ্রিজে ছড়িয়ে পড়তে পারবেনা। পরে রান্নার আগে ভালোভাবে ধোয়া কথা আবার ভুলে যাবেন না।
মাংস বন্টন
আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে সুবিধাবঞ্চিত মানুষ পর্যন্ত সবার মাঝেই এদিনে মাংস বিলি করা হয়। আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে আপ্যায়ন পর্বকে ত্যাগ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এবং দুই পক্ষকেই এক্ষেত্রে সচেষ্ট হতে হবে।
সুবিধাবঞ্চিতদের মাঝে বিলি করার ক্ষেত্রে মাস্ক পরতে হবে এবং যতটুকু সম্ভব সামাজিক দূরত্ব রেখে বন্টনে কাজটি সারতে হবে। এক্ষেত্রে করোনাকালে বিভিন্ন অঞ্চলে ত্রাণ বিতরণের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করতে পারেন।
কোরবানি শেষে পরিচ্ছন্নতা
সকল কাজ শেষে অন্যান্য বছরের মতোই এবারও পশু জবাই ও মাংস কাটার স্থানটি পরিষ্কার করতে হবে। একাজে ব্লিচিং পাউডার, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি যেকোনো শক্তিশালী পরিষ্কারকই ব্যবহার করতে পারেন।
তবে দায় সারাভাবে নয়, ভালোভাবে পরিষ্কার করুন। কোরবানির কাজে ব্যবহার করা সকল সরঞ্জামও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
চামড়া সংরক্ষণ
অন্যান্য বছরের মতো এবার কিন্তু পশুর চামড়া খোলা জায়গায় দলা পাকিয়ে ফেলে রাখা চলবে না। ঢাকনাওয়ালা পাত্রে রাখতে পারেন কিংবা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে পারেন। প্রয়োজনে ঢেকে রাখার আগে তাতে লবণ মাখিয়ে দিতে পারেন। লবণে জীবাণু হয়ত যাবে না। আর তা করার প্রয়োজনও নেই।
করোনাভাইরাসের আতঙ্কটা মারাত্বক হলেও নিজেকে নিরাপদ রাখা কিন্তু জটিল কোনো কাজ নয়। সচেতন থাকুন, নিজের উপস্থিত বুদ্ধিকে কাজে লাগান।
সোনালী/আরআর