করোনাকালীন ২০১৯-২০ অর্থবছর বাদ দিলে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। পাশাপাশি, বিনিয়োগ এবং কৃষি উৎপাদনেও দেখা দিয়েছে অবনতি। অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচকগুলোতে একযোগে নেতিবাচক প্রবণতা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে সংকটের মুখে ফেলেছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি দাঁড়াবে মাত্র ৩ দশমিক ৯৭ শতাংশে। এর প্রধান কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে কৃষি খাতের ধীরগতি—যেখানে প্রবৃদ্ধি কমে হয়েছে মাত্র ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, যা আগের বছর ছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। কৃষি উৎপাদনে গত ১০ বছরের মধ্যে এটিই সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
করোনার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। তবে যদি কোভিড-পরবর্তী অস্বাভাবিক সেই সময় বাদ দেওয়া হয়, তাহলে এতটা কম প্রবৃদ্ধির নজির সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০০১-০২ অর্থবছরে, যেখানে হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ।
অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক—মোট বিনিয়োগের হার—এবার দাঁড়িয়েছে জিডিপির ২৯ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর চেয়ে কম বিনিয়োগ সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল ২০১৩-১৪ অর্থবছরে, তখন হার ছিল ২৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। এছাড়া, মোট দেশজ সঞ্চয় হারের ক্ষেত্রেও ধারাবাহিক পতন লক্ষ করা যাচ্ছে।
দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতির চাপও দেশের অর্থনীতিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। গত টানা তিন অর্থবছর ধরে মূল্যস্ফীতির হার ১০ শতাংশের আশপাশে অবস্থান করছে, যা সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়ে দিয়েছে।
পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে মজুরি বৃদ্ধির হার। টানা ৩৯ মাস ধরে মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে, ফলে বাস্তব আয় কমে গেছে। এতে নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী এবং সামাজিক অস্থিরতার ঝুঁকি বেড়েছে।
এছাড়া বিনিয়োগ পরিবেশেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। গত এক বছরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং বিভিন্ন সহিংস ঘটনার ফলে বেসরকারি খাতে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে নতুন বিনিয়োগ ব্যাহত হচ্ছে এবং অর্থনীতির গতি আরও মন্থর হয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার ঘাটতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অভাব সমাধান না করলে দেশের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় সংকটে পড়তে পারে। এখনই কার্যকর নীতিমালা ও কাঠামোগত সংস্কারের মাধ্যমে আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি।