নিজস্ব প্রতিবেদক : নদীর একপারের মাটি কেটে মাটি বস্তায় ভরে অন্যপারের ভাঙন রোধ করা হচ্ছে কেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে টাঙ্গাইল পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ”নদী ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলতে ঠিকাদার নদী না আকাশ থেকে বালু আনবে সেটা তার বিষয়, আমি জানি না।”
তবে নদীর পার কেটে কোনো বালু আনা যাবে না।
এরপর তিনি বলেন, আপনি সেদিন কোথায় ছিলেন, যেদিন ডিসি, এসপি, উপজেলা চেয়ারম্যান সেখানে গিয়েছিলেন?
এসময় তিনি সাংসদ ছানোয়ার হোসেনের উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনি স্থানীয় এমপিকে গিয়ে ধরেন।
আপনারাই তো তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন। তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন।
কোথা থেকে বালু আনছে, এত রাতে ফোন দিয়ে আপনি আমাকে জিজ্ঞেস করছেন? এমপিকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন এ কথা।
শুক্রবার রাত পৌনে ১১টার দিকে কথা হয় উনার সাথে, তখন তিনি এসব কথা বলেন।
পরে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানের উপর দোষ দিয়ে বলেন, আর নদীর ওপারের মাটি কেটে এপারের ভাঙন রোধ করতে সেদিন আপনাদের উপজেলা চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শিবপুর পাছ বেথর এলাকায় পুংলী নদীর পাশে শহর রক্ষা বাঁধে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়।
এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ভাঙন রোধে কোনো কার্যক্রম নেই।
তবে স্থানীয়রা জানান, সেখান থেকে এক কিলোমিটার দূরে ভাঙন শুরু হয়েছে, যেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কাজ করছে।
একটু এগোতেই দেখা যায়, নদীর এপারে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে।
আর নদীর ওই পার কেটে বালুর বস্তা ভরাট করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে ভাঙন এলাকায় গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়।
এদিকে আব্দুল মালেক নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি জানান, এপারে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে, কিন্তু বালু যেখান থেকে আনা হচ্ছে পরে ওই পারে ভাঙন দেখা দেবে।
পরবর্তীকালে ওই পারের মানুষও ভাঙন কবলিত হয়ে পড়বে।
আজগর আলী নামে আরেকজন বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড দায়সারা ভাবে কাজ করায় প্রতিবছরই ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে।
এবার আবার নতুন করে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ওই পারের মানুষ (যেখান থেকে বালু আনা হচ্ছে) ভাঙনের শিকার হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ঠিকাদার যোগসাজস করে এমন কাজ করছে। এতে করে তাদের খরচ কম হচ্ছে।
তবে সেসময় টাঙ্গাইল পাউবো নির্বাহী কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, তাদের এ কাজ কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নয়, তারা নিজেরাই করছেন।
গত ২৩ জুলাই সদর উপজেলার শিবপুর পাছ বেথর এলাকায় পুংলী নদীর পাশে শহর রক্ষা এ বাঁধের ২৫০ মিটার ভেঙে যায়। এতে হুমকির মুখে পড়েন স্থানীয় এলাকাবাসী।
এ ভাঙন ঠেকাতে আপদকালীন ব্যবস্থা নেয় পাউবো।
তাদের দাবি, ২৫০ মিটার ভাঙন এলাকায় সাড়ে ১৩ হাজার বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলা হয়েছে।
এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা।
তবে এলাকাবাসী জানান, এ ভাঙন রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ড তিন থেকে চার হাজার বালুর বস্তা ফেলেছে।
এতে বাঁধ রক্ষায় কোনো লাভ হবে না বলে মনে করছেন তারা।
সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনছারী বলেন, নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে নদীর ওপার কেটে এপার বালু ফেলার কথা আলোচনা হয়েছিল।
মূলত ভাঙন এলাকায় বালু ফেলার জন্য দূর থেকে বালু আনার কথা।
কিন্তু সেটা না করে খরচ কমানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজসেই নদীর ওপার থেকে এপারে ভাঙন রোধে বস্তা ফেলা হচ্ছে।
তিনি সাংসদের ওপর সব দায় দিয়ে বলেন, এ বিষয়ে এমপি সাহেবই ভাল বলতে পারবেন। সম্পাদনা – অলক কুমার