টাঙ্গাইলে চিকিৎসকের অবহেলায় মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যু; আরএমও’র নেতৃত্বে নিহতের স্বজনদের মারপিট

স্বাস্থ্য প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে চিকিৎসকের অবহেলায় এক বীর মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনার প্রতিবাদ করায় ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিবের নেতৃত্বে রোগীর স্বজনদের অবরুদ্ধ করে মারপিটের ঘটনা ঘটেছে।

মঙ্গলবার (০১ জুন) রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে হাসপাতালের ভিডিও ধারণ করতে গেলে ডিবিসি নিউজের ক্যামেরা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শফিকুল ইসলাম সজিব।

এ সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

জানা গেছে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার হুগড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণনগর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নূর-ই-খোদা মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করে।

এসময় তাকে তাকে টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যায় পরিবারের লোকজন।

এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করেন।

পরিবার তাকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বলে পরিচয় দিলেও সংরক্ষিত আসন ও মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ সময় রোগীর স্বজনদের কাছে দাবি করেন মুক্তিযোদ্ধা সনদ।

ফলে তাৎক্ষণিকভাবে সনদ জমা না দেওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধার স্থান হয় হাসপাতালের মেঝেতে।

ফলে চিকিৎসাসেবা না পেয়ে তার শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।

পরে পরিবার বিকেলে সনদ জমা দিলে মেঝে থেকে কার্ডিওলজি বিভাগের সিসিইউ ওয়ার্ডের ২২৫ নম্বর কক্ষে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

এদিকে বার বার চিকিৎসকের কাছে সুচিকিৎসার আকুতি জানালেও কেউ তাদের সহযোগিতা করেনি।

দায়িত্বরত নার্সের কাছ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে ইনজেকশন ও স্যালাইন কিনতে হয়।

সন্ধ্যায় ইনজেকশন পুশ করার পর সাড়ে ৭টার দিকে মৃত্যু হয় তার।

মৃত্যুর খবরে উত্তেজিত স্বজনরা চিকিৎসা অবহেলার অভিযোগ করলে তাদের অবরুদ্ধ করে হামলা চালায় হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত মুক্তিযোদ্ধার মরদেহ নিয়ে যেতেও বাঁধা দেয় বলে অভিযোগ করেন তারা।

ভূক্তভোগী, অভিযুক্ত ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –

বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে ইমরান জানান, অবরুদ্ধ অবস্থায় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনা জানাই; তখন পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।

ডিবিসি নিউজের ক্যামেরা পারসন আশিকুর রহমান জানান, স্বজনদের অবরুদ্ধ করে মারধর করার ভিডিও ধারণ করতে যাই; তখন আরএমওর নেতৃত্বে হাসপাতালে কর্মরত কয়েকজন ডাক্তার এবং ওয়ার্ডবয় আমার ক্যামেরা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

হুগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন খান তোফা জানান, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে আমাকেও লাঞ্ছিত করা হয়।

এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে সাংবাদিকদের উপর চড়াও হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এসময় তারা ডিবিসি নিউজের ক্যামেরা ভাঙচুরের চেষ্টা চালায়।

চিকিৎসার অবহেলা, স্বজনদের মারপিট ও মরদেহ নিতে বাঁধা দেওয়ায় আবাসিক চিকিৎসকের শাস্তি দাবি করেন তিনি।

রোগীর স্বজনদের মারপিট ও অবরুদ্ধ করার নেতৃত্ব দেওয়া টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম সজিব জানান, রোগীর স্বজনরা নার্সের ওপর হামলা ও হাসপাতালে ভাঙচুর চালিয়েছে।

রোগীর স্বজনদের উপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে চাননি এই আবাসিক চিকিৎসক। সম্পাদনা – অলক কুমার