টাঙ্গাইলে ইউনিসেফ এর নাম ভাঙ্গিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার অভিযোগ

জাতিসংঘের ইউনিসেফ এর নাম ভাঙ্গিয়ে টাঙ্গাইলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক একটি প্রতিষ্ঠানের নামে গত দুই বছর ধরে কোমলমতি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে প্রতারণা করছে বলেও অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ, সাধারণ শিক্ষকরা ও ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে শহরের সাবালিয়া এলাকায় একটি ভাড়া বাসা নিয়ে সুনীতি চিল্ড্রেনস হোমস নামের একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেন বজলুর রশিদ নামের এক ব্যক্তি। এরপর ঐ প্রতিষ্ঠানে একজন অধ্যক্ষ এবং ছয়জন সহকারীর শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়। অধ্যক্ষের বেতন ত্রিশ হাজার টাকা এবং সহকারী শিক্ষকদের দশ হাজার টাকা করে বেতন ধার্য্য করা হয়।

শিক্ষকদের বলা হয়, এটি ইউনিসেফ এর একটি প্রকল্প। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বিনামূল্যে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ড্রেস, প্রতিদিন মাথাপিছু দুইশত টাকা করে টিফিন, মাসিক রেশনের মাধ্যমে চাল, ডাল, তেল, আটা সরবরাহসহ সকল শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা হবে। একথায় আশ্বস্ত হয়ে শিক্ষকরা স্থানীয় বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্লে গ্রæপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ৬৫ জন ছাত্র-ছাত্রী সুনীতি চিলড্রেনস হোমসে ভর্তি করান।

ভর্তির সময় ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বেতন ও সেশন ফি বাবদ এক হাজার টাকা করে নেয় প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়াও প্লে গ্রæপ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচশত টাকা থেকে বারশো টাকা পর্যন্ত বেতন আদায় করা হয়। এভাবে মাসের পর মাস চলতে থাকে।

জানা যায়, গত ২০১৯ সালের ফেব্রæয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা বজলুর রশিদ হঠাৎ মারা যাবার পর তার স্ত্রী জাহান আরা রশিদ ও ছেলে জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ও সাধারণ শিক্ষকদের ১০০০ থেকে ২০০০ হাজার টাকার বেতন হিসেবে প্রদান করা হয়। যদিও অধ্যক্ষের বেতন ত্রিশ হাজার ও সহকারী শিক্ষকদের বেতন দশ হাজার টাকা করে ধার্য্য ছিল।

অধ্যক্ষ রোকসানা আক্তার জানান, এক পর্যায়ে ইউনিসেফ এর বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকদের মাঝে সন্দেহ দেখা দিলে তারা দুই পরিচালককে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র দেখাতে বলেন। কিন্তু পরিচালকদ্বয় তা দেখাতে ব্যর্থ হন। পরিচালক জাহান আরা রশিদ শিক্ষকদের বলেন আপনারা কাজ চালিয়ে যান চলতি বছরেই ইউনিসেফ এর প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এ কথায় আশ্বস্থ হয়ে শিক্ষকরা তাদের দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। কিন্তু ২০১৯ সালেও ইউনিসেফ এর কোন প্রকল্পের দেখা মিলেনি। এ অবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরাও স্কুল ত্যাগ করতে থাকেন। গত অক্টোবরে শিক্ষকরাও প্রতিষ্ঠান থেকে বিদায় নেয়ার কথা জানিয়ে দেন। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জাহান আরা রশিদ ও জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী অধ্যক্ষ ও সাধারণ শিক্ষকদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন। একই ভাবে অনেক অভিবাবককেও তারা ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এব্যাপারে জানতে সুনীতি চিলড্রেনস হোমস এর পরিচালক জাহান আরা রশিদের মোবাইল ফোনে (০১৭১২৩৯৪৭৪২) একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এছাড়াও তার ছেলে ও পরিচালক জাহিদুল ইসলাম চৌধুরীর মোবাইল ফোনে (০১৮২১৮১৬৬১২ ও ০১৭৪২৩৫২৮৫৮) যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে নম্বর দুটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে আর্ন্তজাতিক সংস্থা ইউনিসেফ এর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় এরকম একটি প্রতারণার ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে স্থানীয়দের মাঝে। এলাকাবাসী এই প্রতারণার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেছে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘ শিশু তহবিল বা ইউনিসেফ জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থার নাম। শিশুদের উন্নতি ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে।