টাঙ্গাইলে ভাষা শহীদের প্রতি শিশুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন

টাঙ্গাইলে ভাষা শহীদের প্রতি শিশুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। ছবি-১

নিজস্ব প্রতিবেদক : তারা শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। বাবা-মার কাছে ও বই পড়ে শহীদ দিবস সম্পর্কে জেনেছে।

এছাড়াও এলাকার বড়দের সাথে ইতিপূর্বে শহীদ মিনার শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

সেই অভিজ্ঞতা থেকে তারা নিজ হাতেই গড়েছে এই শহীদ মিনার, তারপর ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে।

কেউ বাড়ির গাছের ফুল দিয়ে, কেউ বাবা মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ফুল কিনে আবার কেউ বাবাকে দিয়ে ফুল কিনিয়ে এনে কলা গাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) মহান ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কলা গাছের তৈরি শহীদ মিনারে কোমলমতি শিশুদের শ্রদ্ধা জানাতে দেখা গেছে।

শিশুরা জানিয়েছে, অভিভাবক এবং বই পড়ে শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের তাৎপর্য জেনে তারা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করে।

তারপর কলা গাছ কেটে ও কঞ্চি এবং মাটি দিয়ে বাড়ির আঙিনায় অস্থায়ী শহীদ মিনার করে শ্রদ্ধা জানায়।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা –

সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা কাগমারা, এনায়েতপুর, পিচুরিয়া, ধরেরবাড়ী, দুরিয়াবাড়ী, বানিয়াবাড়ী, কোনাবাড়ী, চিলাবাড়ীসহ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের শিশুরা বাড়ির উঠানে মাটি দিয়ে উচু করে কলাগাছ পুতে শহীদ মিনার বানিয়েছে।

শিশুরা তাতে বাঁশের কঞ্চি ও রঙিন কাগজ লাগিয়ে সৌন্দর্য্য বাড়িয়েছে।

প্রতিটি মিনারের ওপর অপেক্ষাকৃত ছোট কলাগাছের আরো তিনটি টুকরা তির্যকভাবে আটকে দেওয়া হয়েছে।

রঙিন কাগজ ও নানা রঙের ফুল দিয়ে প্রতিটি মিনার মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

চারপাশে সুতা টানিয়ে তাতে রঙিন কাগজ ও বেলুন দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে ভাষা শহীদের প্রতি শিশুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। ছবি-২

শহীদ বেদীতে বুনোফুল, গাঁদা ও গোলাপফুল শোভা পাচ্ছে। পাশেই শব্দ যন্ত্রে (সাউন্ড সিস্টেম) দেশাত্মবোধক গান বাজছে।

কোথাও কোথাও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে ভোজের আয়োজনও করেছে শিশুরা।

শিশু শিক্ষার্থীদের কথা –

শিক্ষার্থী তাওহীদ মিয়া বলে, ‘বাবা, মা ও স্কুলের বড় ভাই এবং টিভি দেখে ২১ ফেব্রুয়ারি সম্পর্কে জেনেছি।

কিভাবে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে হয় সেটাও আমাদের জানা থাকায় ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছি।’

অপর শিক্ষার্থী কবির হোসেন জানায়, ‘ভাষার মাস শুরু হলেই আমরা পরিকল্পনা শুরু করি, কিভাবে শহীদ মিনার বানাবো, কোথায় ফুল পাবো, কে কে আমাদের কাজে সহযোগিতা করবে।

শহীদ দিবসের আগের দিন থেকে আমরা কাজ শুরু করি।

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে গ্রামের ছেলে মেয়েরা মিলে মিশে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করি।’

শিক্ষার্থী শরিফ মিয়া জানায়, ‘আমাদের মধ্যে কেউ নিজের বাড়ির ফুল আবার অনেকেই বাবাকে দিয়ে শহর থেকে ফুল কিনে এনে শ্রদ্ধা নিবেদন করে ভাল লাগছে।’

সুমা আক্তার জানায়, ‘আমি জানতে পেরেছি বাংলা ভাষার জন্য রফিক, শফিক, জব্বারসহ অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের সম্মানে সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।’

অভিভাবক ও শিক্ষকদের কথা –

মো. শহিদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, আমার ছেলের বায়নার প্রেক্ষিতে তিন বছর যাবত শহীদ দিবসের আগেরদিন শহর থেকে ফুল কিনে আনি।

২১ ফেব্রুয়ারি সকালে আমার ছেলে কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়।

এতে আমি মনে করি শিশু কাল থেকে তার ভাষা শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা ও দেশপ্রেম বৃদ্ধি পাবে।

টাঙ্গাইলে ভাষা শহীদের প্রতি শিশুদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। ছবি-৩

শিক্ষক তন্ময় হাসান বলেন, ‘গ্রামে কোন স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় সকালে শিশুরা নিজেদের তৈরি কলা গাছের শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে।

গ্রামে যে ফুল পাওয়া সেই ফুল দিয়েই শহীদ বেদীতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আবার অনেকেই শহর থেকে ফুল আনিয়েছে।’

সদর উপজেলার ছোট বাসাইল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল আলিম বলেন, ‘শিশুরা বড়দের কাছ থেকে প্রতিটি বিষয় শেখার চেষ্টা করে।

শহীদ মিনার বানিয়ে শিশুদের শ্রদ্ধা নিবেদন আসলেই একটি ভাল দিক; এর ফলে বর্তমান প্রজন্মের শিশুরা ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানার সুযোগ পাবে।’

বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কথা –

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) সহ-সভাপতি বাদল মাহমুদ বলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটি একটি ভাল দিক।

অন্ততপক্ষে গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিশুরা বুঝতে পারছে ২১ ফেব্রুয়ারিতে একটা কিছু হইছে।

সেজন্য গ্রামের কোমলমতি শিশুরা কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার করে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। এটা নিঃসন্দেহে ভাল দিক।’

টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রানুয়ারা খাতুন বলেন, ‘গ্রামে স্থায়ী শহীদ মিনার না থাকায় শিশুরা অস্থায়ীভাবে শহিদ মিনার বানিয়ে যেভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে সেটি আসলেই ভালো উদ্যোগ।

পড়াশুনার মাধ্যমে তারা ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও আমাদের দেশের ইতিহাস সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পারবে।

এতে করে তাদের মধ্যে দেশের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ সম্পাদনা – অলক কুমার