নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে নবনির্মিত মসজিদের নাম পরিবর্তন না হলে কর্তৃপক্ষকে মারধরের হুমকির অভিযোগ উঠেছে মুতালিব হোসেন নামের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।
সদর উপজেলার গালা ও মগড়া ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী দুই গ্রামের নামে নির্মিত হচ্ছে ওই মসজিদ।
মসজিদটি মগড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড বড় বাশালিয়া দক্ষিণ পাড়া এলাকায় হওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্প্রতি দেয়া সেই হুমকির অডিও ও ভিডিও বক্তব্য প্রকাশ পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন স্থানীয় মুসুল্লীসহ দুই গ্রামবাসী।
বড় বাশালিয়া দক্ষিণপাড়া ঈদগাঁ মাঠ আর গত ঈদুল ফিতরের পরের দিন স্থানীয় মাজেদার চা স্টলে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে মসজিদ নির্মাণে সম্পৃক্তদের মারধরের হুমকি দিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান বলে জানিয়েছেন মসজিদ নির্মাণে সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিযোগ, দুই গ্রামবাসীর মসজিদ নির্মাণ ও নামকরণ নিয়ে কোন প্রশ্ন না থাকলেও ক্ষমতাবলে নাম পরিবর্তনের অজুহাত ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পায়তারা করছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
অ্যাডভোকেট মোতালিব হোসেন টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান।
তিনি টাঙ্গাইল টাঙ্গাইল আদালতে আইন পেশায় নিয়োজিত।
স্থানীয়রা জানায়, ২০১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী দূর্গাপুর-বড়বাশালিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের দূর্গাপুরের নেতৃবৃন্দ ও মগড়া ইউনিয়নের বড় বাশালিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের নেতৃবৃন্দ।
মোট ১৪ শতাংশ জমিতে নির্মিত হচ্ছে মসজিদটি।
উদ্যোগের সিদ্ধান্ত অনুসারে বড় বাশালিয়া গ্রামের আজিজুর রহমান মসজিদের নামে ১০ শতাংশ জমি দান করেন।
বাকি ৪ শতাংশ জমি দূর্গাপুরের নেতৃবৃন্দ দান করেন।
এছাড়াও মসজিদ নির্মাণে অধিকাংশ অর্থায়ন করছেন দূর্গাপুরের গ্রামবাসী।
চলতি বছরের ৯ মার্চ থেকে যথারীতি নব-নির্মিত ওই মসজিদে নামাজ আদায়ও শুরু করেছেন মুসুল্লীরা।
মুসুল্লীদের অভিযোগ, মসজিদের নামকরণ নিয়ে দুই গ্রামবাসী একমত থাকলেও ইউপি চেয়ারম্যান একাই বির্তক সৃষ্টি করছেন।
মসজিদ নির্মাণের উনার কোন ভূমিকা না থাকলেও জোড়পূর্বক ও ভয়ভীতি দেখিয়ে একক নামে মসজিদটি নির্মাণের দাবি করছেন তিনি।
৬ মাস আগেও ইউপি চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে ও নতুন করে নির্মাণের নামে ভেঙে ফেলেছেন গ্রামবাসীর একমাত্র বড় বাশালিয়া দক্ষিণ পাড়া বায়তুন নাজাত জামে মসজিদ।
এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের বক্তব্য –
মগড়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মসজিদের মুসুল্লী মো. মাজেদুর রহমান বলেন, আমার চাচা আজিজুর রহমান মসজিদের জন্য একাই দিয়েছেন ১০ শতাংশ জমি, বকি ৪ শতাংশ জমি দিয়েছেন দূর্গাপুরের মানুষ।
আরো পড়ুন – বড়মনিরকে দল থেকে সাময়িক অব্যাহতি, চূড়ান্ত অব্যাহতির সুপারিশ
এটি দুই ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা। দুই গ্রামের নামে মসজিদের নামকরণ হওয়া নিয়ে সমস্যা কি?
আমরা দুই গ্রামের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে মসজিদেও নাম দিয়েছি দূর্গাপুর বড় বাশালিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
মসজিদের মুসুল্লী মো. ওয়াজেদ আলী বলেন, পূর্ব পুরুষের সমন্বয় অনুসারে আমরা এই দুই ইউনিয়নের মানুষ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দুই গ্রামের যৌথ নাম ব্যবহার করে আসছি।
সেই নিয়ম মেনেই এই মসজিদটিও নির্মাণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের পরের দিন মাজেদার চা স্টলে আমাদের হাত-পা কেটে নদীতে ভাসিয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন চেয়ারম্যান মোতালিব।
সেই বক্তব্যের অডিও রেকর্ড আমাদের কাছে আছে। আমরা শান্তি চাই বলে এখনও কোন আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করি নাই।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
মসজিদ কমিটির কথা –
মসজিদ পরিচালনা কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ব্যক্তি আক্রশ নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান হুমকি ধামকি দিচ্ছেন।
এ এলাকায় যৌথ নামে আর কয়েকটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে বাঁশি বড় বাশালিয়া কবরস্থান।
আরো পড়ুন – অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কোন পক্ষকেই সমাবেশ করতে দেয়নি পুলিশ
বাঁশি কালিহাতী উপজেলা আর বড় বাশালিয়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গ্রাম।
এছাড়াও রয়েছে বড় বাশালিয়া দূর্গাপুর মসজিদ ও বড় বাশালিয়া ধলিহাটা মসজিদ। ওই প্রতিষ্ঠানগুলো নাম নিয়ে কোন সমস্যা না হলেও এই মসজিদের নামকরণ নিয়ে সমস্যা কি?
দূর্গাপুর-বড়বাশালিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ এর সেক্রেটারী মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান মোতালিবসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মতামতের ভিত্তিতে মসজিদ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
তখন কারো কোন প্রশ্ন ছিল না।
মসজিদটি দুই গ্রামের হওয়ায় এবং দুই গ্রামে কোন মানুষ যেন নিজের মনে করে অন্যকে ছোট না করতে পারে সেজন্যই মসজিদটির নামকরণ হয়েছে দূর্গাপুর বড়বাশালিয়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ।
দুই গ্রামের নামকরণ নিয়ে এখন কেন প্রশ্ন উঠছে।
চেয়ারম্যান মোতালিব কেন মুসুল্লীদের হাত-পা কেটে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, সেটি আমি জানিনা।
তিনি বলেন, আমরা এক সমাজের মানুষ, রাগ ও ক্ষোভে মোতালিব ওই বক্তব্য দিলেও আমি মনে করি, তেমন কিছুই হবে না।
চেয়ারম্যানের বক্তব্য –
এ বিষয়ে ফোনে বক্তব্য দিতে রাজি হননি মগড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোতালিব হোসেন।