টাঙ্গাইলে যৌতুক চেয়ে মধ্যযুগীয় কায়দায় খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গৃহবধূকে নির্যাতন করেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর মা বাদী হয়ে রোববার (১৪ জুন) বিকালে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিরা সবাই পলাতক রয়েছেন।
স্থানীয়রা জানায়, প্রায় ১৪ বছর আগে সদর উপজেলার সিলিমপুর ইউনিয়নের খারজানা গ্রামের মৃত বিশা মিয়ার ছেলে আশরাফ মিয়ার সঙ্গে পাশের পাকুল্যা গ্রামের ওই নারীর বিয়ে হয়। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে পাষণ্ড স্বামী আশরাফ তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে যৌতুক হিসেবে নগদ টাকা এনে দিতে প্রায়ই শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। সবশেষ গত শুক্রবার (১২ জুন) আশরাফ তার স্ত্রীকে বাবার বাড়ি থেকে দুই লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। কিন্তু টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় আশরাফ ও তার বড় ভাইসহ পরিবারের আরও কয়েকজন গৃহবধূকে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়।
পরে স্থানীয়রা বিষয়টি সিলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাদেক আলীকে জানায়। ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে ওই গৃহবধূকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর মা বাদী হয়ে রোববার টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূ জানান, তার স্বামী আশরাফ প্রায়ই যৌতুকের টাকার জন্য তাকে চাপ প্রয়োগ করেন। বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনতে অস্বীকার করায় তাকে মারধর করে। পরে শুক্রবার তাকে লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পেটানোর এক পর্যায়ে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। বাঁশের খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা তাকে বেধড়ক মারধর করেন।
ওই গ্রামের একাধিক ব্যক্তি জানান, টাকার জন্য ওই গৃহবধূকে তার স্বামী আশরাফ তালাক দিয়েছিলেন। তালাকের পর কাবিনের টাকা দিতে না পাড়ায় বাধ্য হয়ে পুনরায় ওই নারীকেই বিয়ে করেন।
সিলিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেক আলী জানান, খবর পেয়ে বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানাই। এসময় তিনি আরো জানান, এর আগেও ওই গৃহবধূকে তার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন একাধিকবার নির্যাতন করেছেন।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) শফিকুল ইসলাম জানান, ওই গৃহবধূর শরীরে বিভিন্ন আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
টাঙ্গাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর মোশারফ হোসেন বলেন, যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূকে খুঁটিতে বেঁধে মারধর করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছেন। তবে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।