টাঙ্গাইলে ১২৪০টি মন্ডপে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি, দেবী দুর্গাকে সাজাতে ব্যস্ত কারিগররা

বিশেষ প্রতিবেদক : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ও প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পূজা।

আগামী ১১ অক্টোবর সোমবার ষষ্ঠী পূজার মাধ্যমে দেবীর বোধনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে পূজার মূল আনুষ্ঠানিকতা; ঢাক ঢোল, কাসর ঘন্টা ও শঙ্খের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে পূজা মন্ডপগুলো।

সারা দেশের ন্যায় টাঙ্গাইলেও প্রতিমা তৈরিতে চলছে শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি; প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে রং তুলির আঁচড়ে প্রতিমা সাজাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা।

জেলার বিভিন্ন উপজেলায় চাহিদা অনুযায়ী প্রতিমা সরবরাহ করতে দিনরাত রঙয়ের প্রলেপ ও অঙ্গসজ্জা করা হচ্ছে প্রতিমা কারিগররা।

পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, শারদীয় দুর্গোৎসবকে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে তিনটি স্তরে সাজানো হয়েছে; এছাড়া সকল গুরুত্বপূর্ণস্থান সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষনে থাকবে।

টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এবছর জেলার ১২টি উপজেলায় ১২৪০টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এরমধ্যে টাঙ্গাইল সদরে ২০৭টি, দেলদুয়ারে ১১৯টি, বাসাইলে ৬০টি, ধনবাড়ীতে ৩১টি, মধুপুরে ৫৫টি, ঘাটাইলে ৭৮টি, কালিহাতীতে ১৮২টি, ভূয়াপুরে ৪০টি, গোপালপুরে ৪৬টি, সখিপুরে ৪২টি, মির্জাপুরে ২৫২টি এবং নাগরপুরে ১২৮টি মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ এই উৎসবকে ঘিরে প্রতিমা তৈরির কারখানা ও মন্ডপগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

শেষ মূহুর্তে এখন চলছে প্রতিমাগুলোর রঙের প্রলেপ এবং অঙ্গসজ্জার কাজ; শিল্পীর তুলির ছোঁয়ায় পূর্ণাঙ্গ রূপ পাচ্ছে প্রতিমাগুলো।

মনের মাধুরী মিশিয়ে রং তুলির আঁচড়ে মা দুর্গাকে সাজাচ্ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

ষষ্ঠী বোধনের জন্য দেবী দুর্গাকে পূজা মন্ডপে পৌঁছে দিতে কাজ চলছে দিন রাত।

অন্যদিকে মন্ডপে মন্ডপে চলছে সাজ সাজ রব; শেষ মূহুর্তে চলছে প্রতিটি মন্ডপের রং তুলি ও বিদ্যুতায়িত বিভিন্ন অলংকরণসহ সাজসজ্জার কাজ।

শহরের শ্রীশ্রী বড় কালীবাড়ী, ছোট কালীবাড়ী, আদালত পাড়া, রেজিস্ট্রিপাড়া, কলেজ পাড়া, থানা পাড়া, কাগমারী, সন্তোষ পালপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকার পূজা মন্ডগুলোতে সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে আয়োজনের কোন কমতি নেই।

প্রতিমা কারিগরদের কথা –

থানাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্ডপের প্রতিমা তৈরি করতে আসা ভাস্কর শিল্পী অজিত পাল জানান, “গতবছরের তুলনায় এবছর আমি বেশি প্রতিমা তৈরি করছি।

দশটি পূজা মন্ডপের প্রতিমা তৈরির দায়িত্ব পেয়েছি; চাহিদা অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪০ হাজার থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার মধ্যে প্রতিমা তৈরি করি।”

শ্রী শ্রী বড় কালীবাড়ী মন্দিরের প্রতিমা বানানোর কারিগর ছানা চন্দ্র পাল জানান, “বড় কালীবাড়ী যখন ছাপড়া ছিল তখন থেকেই আমার ঠাকুর দাদা এই মন্দিরের প্রতিমা তৈরি করতো।

পূর্ব পুরুষদের পেশা ধরে রাখতেই এখন পর্যন্ত এ পেশায় টিকে আছি। পরিশ্রম অনুযায়ী যে পারিশ্রমিক পাওয়ার কথা; সেই টাকা পাই না।

কাগমারী পোদ্দার পাড়া দুর্গা মন্ডপের কারিগর মানিক পাল জানান, “আমরা প্রতিবছরই প্রতিমা তৈরি করে থাকি; বর্তমানে মাটি, খেড়, রং সব কিছুরই দাম বেশী।

প্রতিমা বানাতে কর্মচারীদের বেতনও দিতে হয় অনেক বেশী। সেই অনুযায়ী কাঙ্খিত মূল্য পাওয়া যাচ্ছে না।”

আয়োজক ও তত্ত্ববধায়কদের কথা –

করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিমা দর্শনসহ সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার অনুরোধ জানান রেজিস্ট্রি পাড়া পূজা কমিটির সভাপতি উত্তম কুমার পোদ্দার।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার গুন (ঝন্টু) জানান, “টাঙ্গাইল জেলায় এবছর ১২৪০টি মন্ডপে দুর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

এটি বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। আশা করছি প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও সফলভাবে পূজা সম্পন্ন করতে পারবো।”

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ টাঙ্গাইল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে জানান, সকলের জন্য এই শারদীয় দুর্গোৎসব হয়ে উঠুক অনাবিল আনন্দের।

মা দুর্গা ধরাধামে এসে পৃথিবীকে করোনামুক্ত করুক, সেই প্রত্যাশা করি।

এসময় তিনি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের জনগণের সহযোগিতা কামনা করেন। সম্পাদনা – অলক কুমার