টাঙ্গাইল পৌরসভার বয়স প্রায় দেড়শ বছর হলেও এখনো গড়ে ওঠেনি আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ফলে শহরের দুই প্রবেশপথ—রাবনা বাইপাস ও কাগমারী শ্মশান ঘাট এলাকা—পরিণত হয়েছে অস্থায়ী ময়লার ভাগাড়ে। এতে একদিকে যেমন পথচারীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন, অন্যদিকে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ।
১৮৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত টাঙ্গাইল পৌরসভার আয়তন ২৯.৪৩ বর্গকিলোমিটার। প্রায় দেড় লাখের বেশি জনসংখ্যার এ শহরে প্রতিদিন বাসাবাড়ি, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য জমা হয়। এসব বর্জ্য শহরের উত্তর ও দক্ষিণ প্রবেশপথে ফেলে দেওয়া হয়, যেখানে গরু-ছাগল ঘুরে বেড়ায়, পাখিরা খাবার খোঁজে এবং টোকাইরা ভাঙারি খুঁজে বেড়ায়। দুর্গন্ধ এতটাই তীব্র যে পথচারীরা নাক চেপে পার হন।
ময়লার ভাগাড়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে প্রায় ২০-২৫টি পরিবার। দৈনিক ৫০০-৬০০ টাকা আয় করে তারা নিজেদের খরচ চালানোর পাশাপাশি বাড়িতেও টাকা পাঠাতে সক্ষম। তবে এসব কাজের ফলে তারা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র জানান, খোলাস্থানে ময়লা ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। শহরের প্রবেশপথে বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে নির্দিষ্ট স্থানে আধুনিক ডাম্পিং স্টেশন স্থাপন করার দাবি জানান তিনি।
এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ বলেন, বর্জ্য থেকে রোগজীবাণু ছড়ায়, যা জনস্বাস্থ্য ও মাটির উর্বরতা নষ্ট করছে। একই সঙ্গে প্লাস্টিকের বর্জ্য ড্রেন বন্ধ করে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করছে।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. সুজাউদ্দিন তালুকদার জানান, খোলা ময়লা থেকে ছড়ানো বায়ুবাহিত রোগে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, ফুসফুসের সমস্যা এবং এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক শিহাব রায়হান বলেন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে, যার কাজ আগামী ডিসেম্বর মাসে শুরু হবে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এতে করে শহরবাসী বর্জ্য সমস্যার স্থায়ী সমাধান পাবে।