সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর, শহীদ সিরাজ লেক (নীলাদ্রি), জাদুকাটা, বারিক্কার টিলাসহ জেলার বেশ কয়েকটি দৃষ্টিনন্দন জায়গায় প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পর্যটকেরা আনন্দ ভ্রমণে আসেন। আর ঈদ কিংবা ছুটিতে কয়েক বছর ধরে এখানে ভ্রমণপিপাসুদের ঢল নামে।
কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে সুনামগঞ্জের সব দর্শনীয় স্থানে পর্যটকদের জন্য প্রশাসনের পক্ষে গত ১৯ মার্চ থেকে সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা এখনো বলবৎ রয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
স্থানীয়ভাবে জানা যায়, ঈদুল আজহা সামনে রেখে এরই মধ্যে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩০ থেকে ৪০টি ভ্রমণকারী দল সুনামগঞ্জের নৌকার মালিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌকা বুকিং দিয়ে রেখেছে। তারা ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে ঈদের ছুটিতে বা ছুটির পর সুনামগঞ্জে ঘুরতে আসার ঘোষণা দিয়েছে। অনেকে ভ্রমণপিপাসুদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকাও নিয়েছে। বাসের টিকেটও কেটে ফেলেছে তারা। অনেকে পুরো বাস রিজার্ভ করে ফেলেছে।
তাহিরপুর এলাকার নৌকার মালিক আয়াতুল (২৬) জানান, এরই মধ্যে ঈদের ছুটিতে একটি দল তাঁর নৌকা বুকিং দিয়ে রেখেছে। তবে বুকিং বাবদ এখনো কোনো টাকা পাঠায়নি। এ রকম প্রায় ৩০ থেকে ৪০টি ভ্রমণকারী দল স্থানীয়দের সঙ্গে যোগাযোগ করে নৌকা বুকিং দিয়ে রেখেছে।
আয়াতুল জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। তাই বাইরের জেলার পর্যটকদের নিয়ে তাঁরা ঘুরে বেড়াতে পারবেন কি না, এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে আছেন। কারণ, ভ্রমণকারীদের নিয়ে গেলে পুলিশ নৌকা ধরে নিয়ে আটক করে রাখতে পারে।
একইভাবে তাহিরপুর এলাকার স্বেচ্ছাসেবী সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘করোনা মহামারি চলাকালে টাঙ্গুয়ার হাওরে মানুষ খুব একটা বেড়াতে আসেনি। তবে ঈদ সামনে রেখে শুনেছি অনেক মানুষ আসতে চাইছে। আমাদের নৌকার মাঝিসহ পর্যটনের সঙ্গে জীবিকা নির্বাহকারী অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা করোনা আসার পর খুব কষ্টে আছেন। কিন্তু পর্যটকেরা এলে আমাদের এলাকার মানুষ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। তাই এলাকার স্বার্থে আমরা চাই না কোনো পর্যটক এ সময়ে এলাকায় আসুক। এরপরও যদি কেউ লুকিয়ে আসে, আমরা নিজেরাই পুলিশকে খবর দেব।’
ঈদ সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের ভ্রমণের খবর জানতে চাইলে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আহাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পরপরই আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরসহ জেলার সব দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছি। এই ঘোষণা এখনো বলবৎ আছে। মহামারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাউকে ভ্রমণে অনুমতি দেব না।’
জেলা প্রশাসক বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণরোধে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে করে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা কম হবে। আর তা না হলে ভ্রমণকারী কেউ আক্রান্ত থাকলে স্থানীয় নৌকার মাঝি, দোকানদার তাদের সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হতে পারেন। আবার স্থানীয়রা কেউ আক্রান্ত থাকলে ভ্রমণকারীরাও আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আমরা সব ধরনের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছি। আর এরপরও কেউ লুকিয়ে চলে আসেন, তাদের প্রতি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সূত্র: ntvbd.com/travel