দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

দলীয় ভাঙন কবলিত কৃষিমন্ত্রীর আসনে আ’লীগের প্রার্থী ৭

টাঙ্গাইল-১ আসন
ছবিতে যারা – উপরে বা থেকে ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, বেগম শামসুন নাহার চাঁপা, সরোয়ার আলম খান আবু, মেহেরুল হাসান সোহেল। নিচে বা থেকে মাসুদ রানা, সিদ্দিকুর রহমান, খন্দকার হাসানুজ্জামান রানা

নিজস্ব প্রতিবেদক : মধুপুর ও ধনবাড়ী, এই দুই উপজেলা নিয়ে টাঙ্গাইল-১ আসন।

এই আসনের সংসদ সদস্য বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়ামের সদস্য ও প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।

দীর্ঘদিন যাবত এই আসনে আওয়মী লীগের অন্তর্দলীয় কোন্দল সৃষ্টি হয়েছে, যা বর্তমানে চরম পর্যায়ে রয়েছে।

ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে বর্ধিত সভাও হয়েছে কৃষিমন্ত্রীর নেতৃত্বে।

আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেই আসনে সেই প্রভাবশালী মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের বিপরীতে ৬ জন নৌকার মনোনয়ন চেয়ে নির্বাচন করার আবেদন করেছেন।

শেষদিন সোমবার বিকেল পর্যন্ত আ’লীগের দলীয় কার্যালয় থেকে মন্ত্রীসহ মোট ৭ জন নেতাকর্মী ও সমর্থক দলের মনোনয়ন সংগ্রহ ও পূরণ করে জমা দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

কৃষিমন্ত্রী ছাড়া দলের মনোনয়ন সংগ্রহ করা বাকি নেতকর্মীরা হলেন- কেন্দ্রীয় আ’লীগের শিক্ষা ও মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাপা, মধুপুর উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের শিক্ষক ধনবাড়ীর মানুষ মেহেরুল হাসান সোহেল, টিভি নাট্য ব্যক্তিত্ব মধুপুরের সিদ্দিকুর রহমান, ধনবাড়ীর হাজরাবাড়ীর মানুষ অটিস্টিক সেবা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা এবং সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন ধনবাড়ীর বীরতারার বাসিন্দা বিদেশেীদাতা প্রতিষ্ঠানের সাবেক কাট্রি ডিরেক্টর খন্দকার হাসানুজ্জামান রানা।

প্রার্থীদের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার –

এদের মধ্যে শামসুন নাহার চাপা, ছরোয়ার আলম খান আবুর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের পথ সুদীর্ঘ।

কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাকের স্বজন শামসুন নাহার চাপা কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে ৮০ দশকের ঢাবির ছাত্র রাজনীতির ধারাবাহিকতায় ভূমিকা রাখছেন।

সাড়ে তিন দশক ধরে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকা ছরোয়ার আলম খান আবুর ছাত্র রাজনীতিতেও আছে উজ্জ্বল অতীত।

দুই দফা হতে চলছে তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।

আওয়ামী রাজনীতিতে কলেজ শিক্ষক মেহেরুল হাসান সোহেলের নাম কম বেশি থাকলেও কমিটিভুক্ত হয়ে স্বক্রিয় রাজনীতির বিশেষ কোন ভূমিকার তথ্য মিলেনি।

নাট্য ব্যক্তিত্ব সিদ্দিকুর রহমান ছাত্র রাজনীতির কথা বললেও প্রকৃত পক্ষে ছাত্র রাজনীতিতে তার ভূমিকা তেমন ছিল না।

আওয়ামী লীগের এক রকম সমর্থক সমাজ সেবক মাসুদুর রহমান ওরফে মাসুদ রানা। অটিস্টিক সেবা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করেন তিনি।

দলীয় কর্মকাণ্ডের কথা নেতাকর্মীদের অজানা। খন্দকার হাসানুজ্জামান ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।

কর্মজীবনে তিনি একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের এশিয়া প্যাসিফিক জোন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ছিলেন।

বর্তমানে সুপর্না গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপানা পরিচালক ও ঢাকা উত্তর মহানগর আ’লীগের সদস্য হাসানুজ্জামান জানান, যোগ্যতার বিবেচনায় মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি শতভাগ আশাবাদী।

এই আসনের রাজনৈতিক ইতিহাস –

এই আসন থেকে স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৩ এর সংসদ নির্বাচনে জাসদ প্রার্থী জয় লাভ করেন।

১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী নির্বাচিত হন। পরে উপ নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী পুনরায় বিজয়ী হন।

১৯৮৬ সালের নির্বাচনে প্রথম আ’লীগ প্রার্থী বিজয়ী হন। ১৯৮৮ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় লাভ করেন।

পরবর্তী ১৯৯১ সালের নির্বাচন থেকে একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত টানা আ’লীগের এ আসন অনেকটা নির্ধারিত হয়ে গেছে।

৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে বিএনপি’র তৎকালীন মহাসচিব ব্যারিস্টার সালাম তালুকদার সংসদ সদস্য পদে নির্বাচিত হন।

এরপর একই (১৯৯৬) সালের নির্বাচনের পর গঠিত আ’লীগের সরকারে টাঙ্গাইলের এ আসনের পুনরায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবুল হাসান চৌধুরী মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হন তিনি। পরবর্তীতে ২০০১ সালের ৮ম সংসদ নির্বাচন থেকে টানা চার বারের এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হচ্ছেন কেন্দ্রীয় আ’লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক।

১/১১ এর পর নির্বাচনে আ’লীগের ২০০৯-১৪ মেয়াদের সরকারে ড. রাজ্জাক খাদ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন।

একাদশ সংসদে তিনি আবারও মন্ত্রীত্ব পান। কৃষিমন্ত্রী হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এবারও নির্বাচনে তিনি শক্ত প্রার্থী।

কিন্তু দলের মনোনয়ন পেতে এবার তার সাথে যুক্ত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। গত নির্বাচনে একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীর কথা শোনা গেলেও এবার তা বেড়ে ৬ এ উন্নীত হয়েছে।

বর্তমান অবস্থা –

কৃষিমন্ত্রীর এ আসনে প্রার্থীতা দ্বন্দ্বে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবুর সাথে দলীয় বিরোধ শুরু হয়েছে গত মধ্য মে থেকে।

১৪ মে বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে নির্বাচন সংক্রান্ত সাক্ষাৎকারে উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীতা ঘোষণা করতে গিয়ে কৃষিমন্ত্রীকে নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেন।

এ নিয়েই দলে অন্তকোন্দল শুরু হয়। দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৩ জুন মধুপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ বাঁধে, সেই থেকে শুরু।

উপজেলা আ’লীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের যৌথ গ্রুপের সাথে কৃষিমন্ত্রী ড. রাজ্জাক গ্রুপের পাল্টা পাল্টি দলীয় কর্মসূচি চলে আসছে।

সরকারে উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরাসহ নির্বাচনী প্রচার কার্য পৃথক কর্মসূচিতে চলছে এসব কর্মসূচি। অব্যাহত আছে সে ধারা।

এ অবস্থাতেই নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু হলো।

এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের এমন ভীড় নিয়ে সাধারণের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে।

ঝটলা করে করে চলছে এসব আলোচনা। উদ্বেগের নির্বাচন মনে হলেও অনেকেই মজা পাচ্ছেন আলোচনায়।

সম্পাদক – অলক কুমার দাস, মোবাইল – ০১৯১১-৪৫৯১৫১