নাগরপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের নাগরপুরে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে মনির নামক যুবককে কথিত সালিশী বৈঠকের মাধ্যমে জরিমানা করেন এলাকার মাতাব্বরা।
রবিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের সারুটিয়াগাজী গ্রামে ঘটনাটি ঘটে।
এ নিয়ে দফায় দফায় শালিসী বৈঠক ইউপি সদস্যসহ ৫ জনকে মারধর করেন মাতাব্বরগণ।
ঘটনার বিবরণ –
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের সারুটিয়াগাজি গ্রামের তাহেরের স্ত্রীর সাথে একই গ্রামের মনজু মিয়ার ছেলে মনিরের সাথে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে উঠে।
১০ এপ্রিল রবিবার রাত ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে তাহেরের স্ত্রীর সাথে মনির দেখা করতে আসে।
এ সময় এলাকাবাসী বুঝতে পেরে মনিরসহ তাহেরের স্ত্রীকে আটক করে সারা রাত ওই দুজনকে মারধর করে বেঁধে রাখে।
পরের দিন সোমবার তাহেরের বাড়ীতে সারুটিয়াগাজীর মো. আনোয়ার প্রফেসারের নেতৃত্বে ও সাবেক ইউপি সদস্য আবু বক্কর এর সভাপতিত্বে দফায় দফায় শালিসী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
তাহেরের ছোট একটি মেয়ে সন্তান থাকার অজুহাতে ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য কথিত মাতাব্বরা আনোয়ারসহ ৬ সদস্যের একটি জুড়ি বোর্ড গঠন করেন।
জুড়ি বোর্ড ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তাহেরের স্ত্রীকে প্রদানের সিদ্ধান্ত নেয়।
মনিরের পক্ষ থেকে এ রায়ে আপত্তি জানালে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। পূণরায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
মনিরের পরিবারের অভিযোগ –
এবিষয়ে মনিরের পরিবারের পক্ষ থেকে জানান, মনির সন্ধ্যার দিকে বাজার থেকে আসার পথে তাহেরের বাড়ীর সামনে এলে পূর্ব শক্রতার জের ধরে তাকে আটকিয়ে সারা রাত মারধর করে বেঁধে রাখে।
পরে তাহেরের স্ত্রীকে জড়িয়ে মিথ্যা অপবাদ দিলে আমরা তার প্রতিবাদ করি।
এতে কথা কাটাকাটি হলে ইমরান মিস্ত্রি ও আনোয়ার মাষ্টারের হুকুমে ইউপি সদস্য সহ আমাদের মারধর করে শালিশী বৈঠকে মনিরকে দিয়ে অপরাধ শিকার করিয়ে আপোষনামায় স্বাক্ষর নেন এবং ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আমরা মানসম্মানের ভয়ে ধার দেনা করে ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা নগদ প্রদান করি।
বাকী ৬০ হাজার ২২ এপ্রিলের মধ্যে না দিলে তারা আমাদেরকে বেঁধে টাকা আদায় করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –
তালুকনগর ডিগ্রি কলেজের প্রফেসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, তাহেরের স্ত্রীর সাথে মনিরের কোন অবৈধ সর্ম্পক পাওয়া যায়নি।
কিন্তু রাতে দেখা করতে আসাটাই তার অপরাধ; সেই কারণে তার বিরুদ্ধে শালিসী বৈঠক বসানো হয়। জরিমানার টাকাগুলো ছেলে চাচার কাছে জমা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
ইউপি সদস্য কাওছার বলেন, মনির আমার চাচাতো ভাই। আমি বিষয়টি জানতে গেলে তারা আমাকে ও আমার পরিবারে লোকজনকে মারধর করে।
ভিকটিমের স্বামী তাহেরের সাথে ফোনে যোগযোগ করলে তিনি জানান, আমারা কোন জরিমানার টাকা পায়নি।
শালিসী বৈঠকের সভপতি আবু বক্কর বলেন, দিনভর শালিসী বৈঠক হলেও কোন সমাধান না আসায় আমি বৈঠক থেকে চলে আসি।
পরদিন আপোষনামায় স্বাক্ষর নিতে আসলে আমি জানতে পারি যে ১ লক্ষ টাকা জমা রাখা হয়েছে।
তবে মোট কত টাকা জরিমানা করা হয়েছে তা আমাকে বলা হয়নি। সমস্ত দায়িত্ব আনোয়ার মাষ্টারের; আমি এ বিষয়ে আর কিছু জানি না। সম্পাদনা – অলক কুমার