বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার রেহাই শাহ্জানী মেহরুন্নেছা দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি ও সুপারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছে মোছা. আকলিমা আক্তার নামে এক প্রার্থী।
এছাড়াও কমিটি বাতিলের জন্য বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিষ্ট্রার ও জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বীর মুক্তিযেযোদ্ধা মো. সামছুল হক।
নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, গত বছরের ১২ ডিসেম্বর আয়া ও নিরাপত্তা কর্মী পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
পরবর্তীতে এই দুই পদে ১১ জন প্রার্থী আবেদন করে। গত ১২ এপ্রিল আবেদনকারীদের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
১৩ এপ্রিল আয়া পদে নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও নিয়োগ বার্ণিজ্যের অভিযোগ এনে চান্দক গ্রামের মোছা. আকলিমা আক্তার নামে এক প্রার্থী জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ –
আকলিমাকে চাকরি দেয়ার জন্য তার বাবার কাছে চার লাখ টাকা দাবি করেন মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুছ ছালাম খান ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি সরোয়ার হোসেন।
এছাড়াও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারও এক লাখ টাকা দাবি করেন।
পরবর্তীতে আকলিমার বাবার কাছে মোট সাত লাখ টাকা দাবি করেন।
আকলিমার বাবা নগদ চার লাখ টাকা মাদ্রাসার সুপারকে প্রদান করেন।
চাকরি হওয়ার পর আরও তিন লাখ টাকা দাবি করেছিলেন সুপার। টাকা না হলে চাকরি হবে না বলে তারা জানিয়ে দেন।
পরে ১২ এপ্রিল নিয়োগ পরীক্ষায় মোছা. তাসলিমাকে নিয়োগ দেয়া হয় ও আকলিমা বাদ পড়েন।
তাসলিমাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
অভিযোগটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে নাগরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।
২২ জুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান আইসিটি কর্মকর্তাকে দিয়ে সরেজমিন তদন্ত করিয়েছেন।
চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে আকলিমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সামছুল হক বাদি হয়ে মাদ্রাসার সুপার আব্দুছ ছালাম খানের বিরুদ্ধে টাঙ্গাইল সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী নাগরপুর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি বাতিলের জন্য ১৩ এপ্রিল জেলা প্রশাসক ও ১৫ এপ্রিল বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের রেজিষ্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, মাদ্রাসার সুপার অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে কমিটি গঠন করেছেন।
কমিটি গঠনের সময় সহকারী শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও সে প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা সহকারী সুপার মো. সরোয়ারকে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত করেন।
যা আইনের বর্হিভূত ও শিক্ষা ম্যানুয়ালের পরিপন্থি। শিক্ষা ম্যানুয়ালে স্পষ্টভাবে লেখা আছে শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হবে।
সে সহকারী সুপারের তথ্য গোপন করে শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন।
প্রতিষ্ঠানে মহিলা শিক্ষিকা থাকা সত্ত্বেও সংরক্ষিত মহিলা আসনটি ম্যানেজিং কমিটি গঠনের সময় বাদ দেয়া হয়েছে।
এছাড়াও সুপার ১৪ লাখ টাকা নিয়ে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন বলেও লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. সামছুল হক।
এছাড়াও মাদ্রাসার জমি লিজসহ বিভিন্ন আয় থেকে লাখ লাখ টাকা আত্মাসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে মাদ্রাসার সুপার আব্দুছ ছালাম খানের বিরুদ্ধে।
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –
মাদ্রাসার সুপার মো. আব্দুছ ছালাম খান বলেন, আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। সামছুল হকের মেয়েকে নিয়োগ দেইনি বলে আদালতেও মামলা করেছেন।
তদন্তকারী কর্মকর্তা উপজেলা আইসিটি অফিসার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, মাদ্রাসা পরিদর্শন করে উভয় পক্ষের কথা শুনেছি। তদন্ত চলমান আছে।