শিক্ষককে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ের নোটিশ
নিজের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য গোপন রাখতেই নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক
গোপালপুর সংবাদদাতা : টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার সাজানপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের তথ্য উদ্ঘাটন করেছিলেন রনি প্রতাপ পালসহ কয়েকজন শিক্ষক।
সেই তথ্য গোপন রাখার জন্য সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপকে মানসিক চাপে রাখা ও সামাজিকভাবে হেয় করতে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
আজ বুধবার রনি প্রতাপসহ বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, অভিভাবক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বললে তাঁরা এমনটি জানান।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে আজ বিকেলে মানববন্ধন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রনি প্রতাপ গোপালপুর উত্তরপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
তিনি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগদান করেন। যোগদানের পরেই তিনি এমপিওভুক্ত হন।
শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল বলেন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ হিসাব নিরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
প্রধান শিক্ষকের কিছু বিল–ভাউচারে সমস্যা ধরা পড়ে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতির স্বাক্ষর জাল করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলতেন তিনি।
নতুন সভাপতি দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাংক হিসাব পরিচালনার সঙ্গে প্রধান শিক্ষককে যুক্ত করেননি।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে যাতে তিনি কোনো কথা না বলতে পারেন, সে জন্য প্রধান শিক্ষক তাঁকে বিয়ের নোটিশ দিয়েছেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও এলাকাবাসীর কথা –
বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন বলেন, রনি প্রতাপকে নিয়ে কেউ কখনো প্রশ্ন তোলেননি।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের আর্থিক বিষয়গুলো এককভাবে নিয়ন্ত্রণ করেন। তাঁর অনেক অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে।
নিজের দুর্নীতি-অনিয়ম ধামাচাপা দিতে রনি প্রতাপকে বিয়ে করার নোটিশ দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক।
সাজানপুর এলাকার ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন বলেন, যে শিক্ষককে বিয়ের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তিনি খুবই ভালো মানুষ।
কেউ কখনো তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেননি।
একই এলাকার গৌতম চন্দ্র দাস অভিযোগ করেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম নিজের ইচ্ছেমতো প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। অন্য শিক্ষকদের গুরুত্ব দেন না।
ভূক্তভোগী শিক্ষকের কথা –
রনি প্রতাপ বলেন, এর মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক আমাকে মানসিক চাপে রাখতে চেয়েছেন। আমি এ নোটিশ প্রত্যাহার চাই।
প্রধান শিক্ষকের কথা –
অভিযোগের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, অনিয়ম দুর্নীতির তথ্য গোপন রাখার জন্য বিয়ের নোটিশ দেওয়ার বিষয়টি সত্য নয়। শুধু বিয়ে করার বিষয়টি জানানোর উদ্দেশেই চিঠি দিয়েছেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, মঙ্গলবার তিনি ওই বিদ্যালয়ে গিয়েছিলেন। নোটিশের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রতিষ্ঠানটিতে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে।
এটি তদন্তের জন্য সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে আহ্বায়ক এবং অন্য দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে সদস্য সচিব করে একটি তদন্ত কমিটির প্রস্তাব করা হবে।
উল্লেখ্য –
প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বিয়ের করার জন্য গত ২৬ জুলাই সহকারী শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে লিখিত নোটিশ দেন।
নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে কর্তৃপক্ষকে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
নোটিশ পাওয়ার দুই দিন পর রনি প্রতাপ প্রধান শিক্ষককে লিখিত জবাব দেন।
জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, ‘পারিবারিক ও ধর্মীয় রীতির কারণে আগামী অগ্রহায়ণ মাসে আমার অভিভাবকেরা আমাকে বিবাহ করাবেন বলে জানিয়েছেন।’
রনি প্রতাপ গত ৩০ জুলাই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিতভাবে প্রধান শিক্ষকের নোটিশের বিষয়টি জানান।
সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমি অবিবাহিত থাকলেও কোনো অভিভাবক বা শিক্ষার্থী কখনো কারও কাছে আমার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।’
