অলক কুমার (সম্পাদক) : সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক নিজ আসনের দলীয় অখন্ডতা ধরে রাখতে পারেন নি বলে মন্তব্য করেছেন মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান ওরফে আবু খাঁ।
তিনি বলেন, সারা টাঙ্গাইল জেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় বিভাজন তৈরি করেছেন কৃষিমন্ত্রী।
আরো পড়ুন – চুরি করার জন্য ঘরে ঢোকা, চিনে ফেলায় হত্যা – পিবিআই এসপি
এসময় তিনি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের নামে মধুপুরে “বিশেষ বর্ধিত সভা” ডাকা হয়েছে; কিন্তু আমরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কিছুই জানি না।
কৃষিমন্ত্রী সহ-সভাপতিকে দিয়ে সভা আহবান করিয়েছেন।
যাঁরা এই সভা ডেকেছেন, তাঁরা সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের জানানো হবে।’
এসময় তিনি আরো বলেন, অনেক নেতাদের ভয় ও লোভ দেখিয়ে বর্ধিত সভায় নেওয়া হয়েছে।
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আলোচনা করে খুব শিগগিরই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ডাকবেন।
গতকাল মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) মধুপুর আওয়ামী লীগের ‘বিশেষ বর্ধিত সভা’ অনুষ্ঠিত হয়।
এই বিশেষ বর্ধিত সম্পর্কে তাঁর নিকট জানতে চাওয়া হলে, তিনি মুঠোফোনে এসব কথা বলেন।
বিভিন্ন সূত্রে যা জানা যায় –
সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছেন, এই বিশেষ বর্ধিত সভার মধ্য দিয়ে আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল টাঙ্গাইলের মধুপুর আওয়ামী লীগের বিভক্তি।
উপজেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দুই-তৃতীয়াংশ নেতাকর্মী এই সভায় উপস্থিত ছিলেন না বলেও তারা মন্তব্য করেন।
আরো পড়ুন – বিবস্ত্র সাংবাদিকতা!!
দলীয় একটি সূত্র জানায়, মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান ওরফে আবু খাঁ টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন।
গত মে মাসে এ ঘোষণা দেওয়ার পর উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভক্তি প্রকাশ হতে থাকে।
এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।
তাঁর অনুসারীরা সরোয়ার আলম খানের প্রার্থিতাকে ভালোভাবে নেননি। এ নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি বাড়তে থাকে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফি উদ্দিন মনি ও সাধারণ সম্পাদক সরোয়ার আলম খান ওরফে আবু খাঁ গত ২৩ জুন সমাবেশের আয়োজন করেন।
ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এরপর থেকে দুই পক্ষের ‘মুখ দেখাদেখি’ বন্ধ হয়ে যায়।
কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী কারা –
আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী, পৌর মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মীর ফরহাদুল ইসলাম ও সাদিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকালের বিশেষ বর্ধিত সভা ডাকা হয়। মধুপুর অডিটরিয়ামে আয়োজিত সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। এতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাঁদের অনুসারীরা অংশ নেননি।
সভা সূত্র জানায়, বিশেষ বর্ধিত সভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াকুব আলী।
ইয়াকুব আলী ও স্থানীয় নেতারা যা বলেন –
এবিষয়ে ইয়াকুব আলী বলেন, আমার কি এই সভা আহবান করার কোন সুযোগ আছে?
মন্ত্রী মহোদয়ের পরামর্শেই আমি এই বিশেষ বর্ধিত সভা আহবান করছি এবং সভা সফল হয়েছে।
আমরা মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বহিস্কার দাবি করেছি।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা বলেছেন, মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ আসনে ২০০১ সালে আব্দুর রাজ্জাক দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এরপর ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে তিনি সংসদ সদস্য হন। দু’বার তিনি মন্ত্রীও হয়েছেন।
মধুপুরে দলীয় ও সরকারি বিভিন্ন বিষয়ে আব্দুর রাজ্জাক দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন সরোয়ার আলম খানকে।
একসময় সরোয়ার দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে মে মাসে ঘোষণা দেন।
গণমাধ্যমে কৃষিমন্ত্রীকে কটুক্তি করে বক্তব্য দেন। এর পর থেকেই দলীয় কোন্দল প্রকাশ পায়।