ফলোআপ : টাঙ্গাইলে সাংবাদিকের মাকে গলাকেটে হত্যা

চুরি করার জন্য ঘরে ঢোকা, চিনে ফেলায় হত্যা – পিবিআই এসপি

সাংবাদিকের মাকে হত্যাকারী দুই যুবক

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সাংবাদিকের মায়ের বাড়িতে চুরি করতে যান প্রতিবেশী দুই যুবক।

ওই সাংবাদিকের মা সুলতানা সুরাইয়া চিনে ফেলেন তাদের। তখন ওই যুবকের মধ্যে একজন গামছা দিয়ে তার মুখ বেঁধে ফেলেন।

অপরজন ছুড়ি চালান গলায়। এতে মৃত্যু হয় সুলতানা সুরাইয়ার।

পিবিআই টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সিরাজ আমীন বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে তার নিজস্ব কার্যালয়ে এক প্রেস বিফিংয়ের মাধ্যমে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন – ভূঞাপুরে এমপি-মেয়রের একই স্থানে পাল্টাপাল্টি নৌকা বাইচ

সুলতানা সুরাইয়ার (৬৫) ছেলে আবু সায়েম আকন্দ দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার বার্তা সম্পাদক।

তিনি সাবেক পুলিশ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মৃত আব্দুর রহিম আকন্দের স্ত্রী।

গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলো- টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার চরপৌলীর মো. শাহজাহান এর ছেলে মো. লাবু (২৯)।

তিনি বেশ কিছুদিন যাবত সিরাজগঞ্জ জেলার সয়দাবাদ পূনর্বাসনে বসবাস করেন।

অপরজন হলো – জেলার ভ‚ঞাপুর উপজেলার পশ্চিম ভ‚ঞাপুর এলাকার মো. সিরাজ আকন্দের ছেলে আল আমিন আকন্দ (২২)।

প্রেস ব্রিফিং যা জানান – 

পুলিশ সুপার জানান, সুলতানা সুরাইয়া ওই বাড়িতে একাই থাকতেন। তার ছেলে ঢাকায় থাকেন, দুই মেয়ে স্বামীর বাড়িতে থাকেন।

আসামী আল আমিন আকন্দ হত্যাকান্ডের স্বীকার সুলতানা সুরাইয়ার সম্পর্কে নাতি লাগে। সে বিভিন্ন সময় সুরাইয়া সুলাতানার বিভিন্ন কাজ কর্ম করে দিতো।

সেই সুবাদে এই বাড়িতে সার্বক্ষণিক যাতায়াত ছিলো। আল আমিন বিভিন্ন সময় তার কাছ থেকে টাকা পয়সাও নিতো।

ঘটনার দিন তারা বাড়ির গ্রিল বেয়ে টিনের বেড়ার ভিতরে প্রবেশ করে ও ঘাপটি মেরে বসে থাকে।

আরো পড়ুন – নাগরপুরে সাংসদ ও উপজেলা আ’লীগের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে

পরে রাত আনুমানিক রাত ১২টার দিকে সুলতানা সুরাইয়া বাথরুমে যায়। সে সময় দরজা খোলা পেয়ে তারা ঘরে প্রবেশ করে।

বাথরুম থেকে ফিরে তাদের দেখে এবং চিনে ফেলে। সে সময় তিনি চিৎকার করে লোকজন ডাকার চেষ্টা করলে আসামীরা তাকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে গলায় ছুড়ি চালিয়ে হত্যা করে। পরে তারা টাকা ও মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়।

এরপর গত বৃহস্পতিবার রাত আটটার দিকে প্রতিবেশী ও পরিবারের সদস্যরা তার মুঠোফোন বন্ধ পান।

পরে তারা ্ওই বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা বাইরে থেকে তালা দেওয়া অবস্থায় দেখতে পান।

কিন্তু ভেতরে বাতি জ্বলতে ও বৈদ্যুতিক পাখা চলার শব্দ পান। এতে তাদের সন্দেহ হয়।

টিনের বেড়ায় উকি দিয়ে ভেতরে তাকে মেঝেতে পরে থাকতে দেখেন।

খবর পেয়ে পুলিশ রাত ১২টার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। পরে ভোরের দিকে তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

এ ঘটনায় নিহতের ছেলে সাংবাদিক আবু সায়েম আকন্দ বাদি হয়ে শুক্রবার বিকেলে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

এতে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করা হয়। রোববার মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে।

মামলার পর পিবিআই তদন্ত করে যেভাবে –

তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা ওই নারীকে হত্যার পর যে মুঠোফোন লুট করা হয়, তার সূত্র ধরে দুইজনকে শনাক্ত করা হয়।

পরে তাদের আটক করা হয়।

আরো পড়ুন – দেশে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি – কৃষিমন্ত্রী

জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যা ও মোবাইল ও মালামাল চুরির কথা স্বীকার করেন।

পরে তাদের একজন মুঠোফোন নেন। অপরজন লুণ্ঠিত টাকা নেন। যিনি মুঠোফোন নেন, তিনি ওই ফোনের সীম যমুনা নদীতে ফেলে দেন।

আর মুঠোফোনটি তিনি দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেন।

অপরজন যার বাড়ি সুলতানা সুরাইয়ার বাড়ির পাশে, তিনি নগদ টাকাগুলো নিয়ে নিজ বাড়িতে ঘুমিয়ে পড়েন।

সুলতানা সুরাইয়ার মরদেহ উদ্ধারের পর সবার সাথে তিনিও লাশ দেখতে আসেন। পরদিন জানাযাতেও অংশ নেন।

এই ঘটনায় ব্যবহৃত ছুড়ি, লুণ্ঠিত মুঠোফোনসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করে পিবিআই।