নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার পাথরাইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দ্বীনবন্ধু প্রামাণিক এবং বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বড়মনির অপসারণ ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, এলাকাবাসী এবং বিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
১৮ আগস্ট রবিবার সকালে স্থানীয় ইসকন মন্দির থেকে শুরু হয়ে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে গিয়ে শেষ হয় বিক্ষোভ মিছিল।
আরো পড়ুন – মেয়র পলাতক। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পরিচালনা পরিষদ
সেখানে মানববন্ধন এবং প্রধান শিক্ষকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালিত হয়।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন।
খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোস্তফা আব্দুল্লাহ্ আল নূর, দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম, ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে যথাযথ নিয়ম কানুন অনুসরনের মাধ্যমে বরখাস্তের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করেন।
জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতির বিরুদ্ধে ১০ দফা অভিযোগনামা পেশ করেছেন বিক্ষোভকারীরা।
অবিলম্বে তারা এ দুজনের পদত্যাগ বা অপসারণ চেয়ে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানায়।
এ বিষয়ে আন্দোলনকারীরা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ –
অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক দীন বন্ধু প্রামানিক একজন দলবাজ, চরিত্রহীন, লম্পট। তার কাছে ছাত্রীরা নিরাপদ নন।
তিনি সন্ত্রাসী এবং দলীয় ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে দীর্ঘদিন অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক হিসেবে থেকে গেছেন।
তিনি নিজের নিয়োগ এর লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন নিজেই তৈরি করেছেন।
যার প্রমাণ তাদের হাতে রয়েছে। তিনি ধর্মীয় শিক্ষক থেকে সরাসরি প্রধান শিক্ষক হয়ে নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন।
আরো পড়ুন – কর্মীদের ছেড়ে পালিয়েছে এমপি-মন্ত্রী-নেতারা। অসহায় কর্মীদের ক্ষোভ
গুরুতর অভিযোগ হলো তিনি বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক করেছেন।
পরকীয়ায় আসক্ত এক নারীকে বিয়ে করতে তিনি হিন্দু থেকে মুসলিম হয়ে, দীন ইসলাম নাম ধারণ করেন।
গোপনে বিয়ের পর ওই নারীর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভয়-ভীতি দেখিয়ে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
দাবি করেন, তিনি মুসলিম থেকে আবার হিন্দু হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সম্প্রদায় ভীষণ ক্ষুব্ধ।
সেইসঙ্গে এহেন চরিত্রহীন শিক্ষকের কাছে ছাত্রীরা অনিরাপদ বোধ করছেন। বিব্রত অভিভাবকগণও।
জানা গেছে, ভূক্তভোগী নারী প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন।
কিন্তু জেলা পর্যায়ের চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে ভয়ভীতি দেখিয়ে ওই মামলার কার্যক্রম বন্ধ করিয়ে দিয়েছেন।
প্রধান শিক্ষক এসব অপকর্ম করেছেন রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, অবৈধ অর্থ এবং সন্ত্রাসীদের পেশী শক্তির সাহায্য নিয়ে।
প্রধান শিক্ষকের সাথে আরো যারা যুক্ত –
অভিযোগ করা হয়েছে, শীর্ষস্থানীয় সন্ত্রাসী এবং ধর্ষণ মামলায় অভিযুক্ত, অর্ধ শিক্ষিত নারী লিপ্সুকে প্রধান শিক্ষক নিজের অপকর্ম হাসিলের জন্য পরিচালনা কমিটির সভাপতি করেছিলেন, যিনি ‘বড় মনি’ নামে কুখ্যাত।
ধর্ষণ মামলা এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর যিনি এখন পলাতক।
সভাপতি বিদ্যালয়ে যেতেন না, শুধু অবৈধ টাকার ভাগ-বাটোয়ারা বুঝে নিতেন।
দেলদুয়ার উপজেলায় অনেক শিক্ষানুরাগী, এমপি ও যোগ্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থাকতেও নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রধান শিক্ষক অন্য উপজেলার একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সভাপতির পদে বসিয়েছেন, যা শিক্ষা প্রসারে অন্তরায় হিসেবে কাজ করেছে।
বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে যোগ্য কাউকে সভাপতি নিয়োগের দাবি তুলেছেন তারা।
স্কুলের পুকুরের মাছ বিক্রি, মাটি বিক্রি! গাছ বিক্রি এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে আদায় করা অতিরিক্ত অর্থ প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ভাগ-বাটোয়ারা করে নিতেন।
অবৈধ বাণিজ্যের মাধ্যমে অযোগ্য শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।
এই কাজে সার্বিক সহযোগিতা করতেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ।
অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি টাঙ্গাইল শহরে অবস্থান করায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মনিটরিং হতো না।
পলায়নপর মনোবৃত্তির কারণে প্রধান শিক্ষকের অনীহায় জাতীয় কোনো কর্মসূচিই স্কুলে পালন করা হয় না।
এসব কারণে শিক্ষক-ছাত্রছাত্রী, অভিভাবক এবং এলাকাবাসীর সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়েছে, ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
তারা এ বিষয়ে প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ চেয়েছেন।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –
বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি অবৈধ কর্মকান্ড, প্রতারনা অনিয়ম দুর্নীতিতে ডুবে একটি সনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন বলে দাবি পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল আজিজ খানের।
এসকল অপকর্মের সহযোগী পাথরাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাম প্রসাদ বলেন, আমি ওই পুকুরের মাটি খনন করে একটি রাস্তার কাজ করেছি। তিনি বলেন, সেসময় স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাও আমার সাথে ছিলেন।
কোন রাস্তার সংস্কার কাজ করেছেন সেবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন উত্তর দেন নি।
অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক দ্বীনবন্ধু প্রামানিকের মোঠোফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি নেই সেহেতু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা জটিল।
তবে নিয়মতান্ত্রীকভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।