দেশজুড়ে সব অঞ্চলেই কম-বেশি দেখা যায় পেয়ারা গাছ। কিন্তু সমগ্র বাজার চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখে আটঘর কুড়িয়ানার পেয়ারা। পিরোজপুর জেলার নেছারাবাদ উপজেলার কুড়িয়ানা গ্রামে মাইলের পর মাইল বাগান করে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় পেয়ারা। বাগান থেকে সদ্য তোলা পেয়ারা খাওয়া ও দেখার সুযোগ আছে সেখানে। আমাদের আজকের যাত্রা পেয়ারার গ্রাম খ্যাত আটঘর কুড়িয়ানার পথে।
জমির আয়তনভেদে ছোট-বড় অগণিত পেয়ারাবাগান রয়েছে এই গ্রামে। স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, এখানে এক থেকে ১০ একরের বাগান আছে। পেয়ারা উৎপাদন ও রপ্তানিতে এই অঞ্চল বাংলাদেশে অন্যতম। সুস্বাদু হওয়ায় এ অঞ্চলের পেয়ারার চাহিদা অনেক বেশি। মৌসুম আগমনে এখন ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার পেয়ারা চাষিরা।
পেয়ারাবাগানের ভেতরে ঢুকতেই মন ভরে যায় সবুজ-হলুদের সমারোহে। সারি-সারি পেয়ারা গাছে কাঁচা-পাকা পেয়ারা ঝুলে আছে। হাত বাড়িয়ে কিছু পেয়ারা তুলে নিলেও চাষিরা নিষেধ করেন না। পর্যটক এলে চাষিরাই হাসিমুখে আপ্যায়ন করে হাতে পেয়ারা তুলে দেন। যেমন রসে ভরা, তেমন মিষ্টি এসব পেয়ারা। যেন ইচ্ছে হবে পুরো বাগানের পেয়ারা খেয়ে ফেলতে!
প্রতিটি বাগানের ভেতর দিয়ে জালের মতো বয়ে গেছে অসংখ্য ছোট খাল। একবার পথ হারালে নির্দয় খালগুলো আর সামনে এগোতে দেবে না। নির্দিষ্ট পথ ধরে এগোলে মিলবে গাছের সাঁকো। ছোট্ট খালের দুপার থেকে দুটি গাছ ফেলে নির্মাণ করা হয় এসব সাঁকো। সাঁকো পেরিয়ে বাগানের লোকজন যাওয়া-আসা করে বাগানের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে।
সুবিশাল সবুজ বাগানে টসটসে পেয়ারা ও চাষিদের কর্মযজ্ঞ দেখতে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসেন অসংখ্য পর্যটক। নদীপথ ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব হবে না প্রকৃত বাগানের সৌন্দর্য অবলোকন। তাই দর্শনার্থী পরিবহনের সুবিধার্থে বাণিজ্যিক উদ্যোগে ব্যবস্থা আছে ট্রলারের। এসব ট্রলারের মাঝিরা নিজ উদ্যোগে ঘুরিয়ে দেখান অচেনা পর্যটকদের।
সতর্কতা : লোকাল গাইড ছাড়া বাগানের গভীরে ঢুকলে বের হয়ে আসা খুব কঠিন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটলেও বাগান শেষ নাও হতে পারে, কারণ দিকভ্রম অচেনা পথিক হয়তো বারবার ফিরে আসে একই স্থানে। আর এমন ঘটনা ঘটলে খাদ্য হিসেবে পেয়ারা আর নদীর পানি আপনার একমাত্র ভরসা।
যে পথে যাবেন আটঘর কুড়িয়ানা : নিজের মতো করে লঞ্চ বা বাসে যেতে হবে বরিশাল শহরে। নথুল্লাবাদ থেকে নেছারাবাদ রুটের বাস/ মাহিন্দ্রা করে কুড়িয়ানা। অথবা স্বরূপকাঠি যাওয়ার পথেই নেমে যেতে পারেন বানারীপাড়া। বানারীপাড়া থেকেও ট্রলার রিজার্ভ করে যাওয়া যাবে পেয়ারার ভাসমান বাজার ভিমরুলি হয়ে গভীরে পেয়ারাবাগানে। এ ছাড়া বরিশাল হাতেম আলি চৌমাথা থেকেও ম্যাজিক গাড়িতে যাওয়া যাবে ভিমরুলি পর্যন্ত। নৌকায় ঘুরতে হবে পেয়ারাবাগানের মধ্যকার খালগুলোতে।
সূত্র: ntvbd.com/travel