প্রধানমন্ত্রীর প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশ অমান্য, ফসলি জমি কেটে রাস্তা তৈরি

ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে রাস্তা তৈরি। ছবি-১

অলক কুমার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আবাদি জমি ফেলে না রেখে প্রতি ইঞ্চি জমিতে ফসল ফলানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

আর সেখানে ফসলি জমি নষ্ট করে রাস্তা নির্মাণ করা হচ্ছে টাঙ্গাইলে কালিহাতী উপজেলায়।

উপজেলার বাংড়া ইউনিয়নের পাথালিয়া হতে দেবীতলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে এই ফসলি জমি নষ্ট করা হচ্ছে।

এতে অন্তত দুই একর (দুই’শ শতাংশ) ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকেরা।

কোন প্রকল্প ছাড়াই টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর মৌখিক নির্দেশে এইভাবে রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে বলে জানান ঠিকাদার।

জানা যায়, কালিহাতী উপজেলার দেবীতলা হতে পাথালিয়া পর্যন্ত রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবত সংস্কারের অভাবে স্থানীয়দের ভোগান্তি চরমে উঠেছে।

একপর্যায়ে স্থানীয় জনগণ রাস্তাটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব সোহেল হাজারীর দ্বারস্থ হন।

পরবর্তীতে সাংসদ সদস্য বাংড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ১ নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শাহিনকে রাস্তাটি সংস্কারের দায়িত্ব দেন।

সেই দায়িত্ব পেয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন স্থানীয়দের ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক গভীর গর্ত করে মাটি কেটে রাস্তা সংস্কার শুরু করেন।

এতে করে একজন কৃষকেরই ৬০ শতাংশ জমি ফসল উৎপাদনের অনুপযোগী হয়ে গেছে।

এই কাজে অনন্ত দুই একর ফসলি জমি কৃষি কাজের অনুপযোগী হয়ে যাবে বলে জানান জমির মালিক কৃষকেরা।

ভূক্তভোগীদের বক্তব্য :

এবিষয়ে ভূক্তভোগীরা তাদের জমি থেকে মাটি দিতে রাজি হয়, কিন্তু বেকু দিয়ে গভীর গর্ত করে মাটি কাটার সময় বাঁধা দিলে দেখানো হচ্ছে নানা ভয়ভীতি, দেয়া হচ্ছে হুমকি।

স্থানীয়দের দেওতলার ভূক্তভোগী শুকুর মাহমুদ বলেন, আমার ২৫ শতাংশ ফসলি জমির মধ্যে ১৫ শতাংশ থেকে গর্ত করে মাটি কেটে নেয়।

এসময় আমি বাঁধা দিলে তারা জেদ করে আরো গভীর করে মাটি কেটে নেয়। তাছাড়া তারা শত্রুতা করে আমার বাড়ির দিকে বাকিয়ে রাস্তাটি নেয়।

ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক আব্দুল হামিদ তালুকদার বলেন, আমার প্রায় ৬০ শতাংশ জমি গভীর গর্ত করে মাটি কেটে নেয়। এতে আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে।

একই এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক মো. আব্দুর রশীদ সরকার জানান, এই গ্রামটা আগে থেকেই অবহেলিত ছিলে।

আমরা গ্রামবাসী এমপি মহোদয়ের নিকট রাস্তার উন্নয়ন চাইলে তিনি আমাদের রাস্তাটি করে দিচ্ছেন।

কিন্তু যেভাবে মাটি কেটে রাস্তা তৈরি করা হচ্ছে, তাতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কোন ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে না।

ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে রাস্তা তৈরি। ছবি-২

এবিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হুরমুজ আলী রাস্তার জন্য স্থানীয় সাংসদকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমাদের জমি থেকে যেভাবে মাটি কাটা হচ্ছে; তাতে এই রাস্তা টিকবে না। বৃষ্টি হলেই জমির মাটি জমিতে এসে পড়বে।

এসময় ভূক্তভোগীরা আরো বলেন, তারা স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা হওয়ায় তাদের ভয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারি না; আমরা সরকারের কাছে এই জমির ক্ষতি পূরণ চাই।

কাজের দায়িত্বপ্রাপ্তের বক্তব্য :

এ বিষয়ে ঠিকাদার শাহিন মুঠোফোনে জানান, পিআইও অফিসে যান কাজটি সেখান থেকে আমাদের কাজের সমস্ত কাগজ পাবেন।

এসময় তিনি আরো বলেন, আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য সোহেল হাজারীর নির্দেশে এই কাজ করতেছি।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সেহাব উদ্দিন জানান ভিন্ন কথা।

এই কাজটি সম্পর্কে পিআইও কিছুই জানে না কাগজে কলমে কোন প্রকল্প দেওয়া হয়নি; যদি কেউ আমার অথবা আমাদের অফিসের নাম ব্যবহার করে থাকে, সেটি মিথ্যা কথা।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও সংসদ অধিবেশন চলায় টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাসান ইমাম খান সোহেল হাজারীর মন্তব্য জানা যায়নি।