টিকটক ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এখন কেবল বিনোদনের প্ল্যাটফর্ম নয়, বহু প্রবাসীর কাছে তা হয়ে উঠছে অতিরিক্ত আয়ের উৎস। তবে এই ‘অনলাইন ইনকামের মোহ’ প্রবাসীদের মূল কাজ, মনোযোগ ও কর্মদক্ষতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
বিদেশে কঠোর কর্মঘণ্টা, শারীরিক পরিশ্রম ও দায়িত্বপূর্ণ কাজের মাঝেও অনেক প্রবাসী নিয়মিত ভিডিও তৈরি, লাইভ করা বা কনটেন্ট বানাতে ব্যস্ত থাকছেন। এতে ক্লান্তি, অনিয়মিত ঘুম, কাজে ভুল, উৎপাদনশীলতা হ্রাসসহ নানা সমস্যায় পড়ছেন তারা। ফলে টিকটক–ফেসবুকভিত্তিক ইনকামের প্রতি অতিরিক্ত আগ্রহ প্রবাসীদের পেশাগত স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকি তৈরি করছে।
মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া ও নানা দেশে অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মস্থলে বা কর্মঘণ্টায় ভিডিও তৈরি করছেন, যা নিয়োগকর্তাদের কাছে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। নির্ধারিত কাজ শেষে ওভারটাইম করে আয় বাড়ানোর সুযোগ থাকলেও অনেকেই সে সময় ব্যয় করছেন কনটেন্ট তৈরিতে। এতে কাজের দক্ষতা কমছে, ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে, এমনকি চাকরি হারানোর ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে।
রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী মনে করেন, প্রবাসীদের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে সচেতনতা তৈরি জরুরি। বিএমইটি ও টিটিসির প্রশিক্ষণে সোশ্যাল মিডিয়ার সঠিক ব্যবহার নিয়ে আলাদা নির্দেশনা থাকা উচিত বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
যদিও কনটেন্ট তৈরি করে সাফল্য পাওয়া উদাহরণও আছে। টাঙ্গাইলের মানিক মিয়া টিকটকে ভাইরাল হয়ে ১০ মিলিয়ন ফলোয়ার পেয়েছেন। সৌদি আরবে কাজের ফাঁকে ভিডিও বানিয়ে অনলাইনে খ্যাতি অর্জনের পর দেশে ফিরে ব্যবসা করছেন তিনি। তবে এমন সফলতার গল্প খুবই সীমিত।
অন্যদিকে অধিকাংশ প্রবাসী বিভিন্ন কাজে ৪০–৫০ হাজার টাকার বেশি আয় করতে পারেন না। ওভারটাইম করলে আয় বাড়লেও অনেকে ৮ ঘণ্টার বাইরে কাজ করতে চান না। কেউ ব্যস্ত থাকেন টিকটক–ফেসবুকে, কেউ অনলাইন গেম বা জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছেন, ফলে দেশে টাকা পাঠাতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১২ নভেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১১ হাজার ৪৯৫ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে বহু বেশি। তবে দক্ষ কর্মী বাড়ানো, শ্রমিকদের আসক্তি কমানো এবং প্রবাসীদের কর্মসংস্থান রক্ষায় সচেতনতা জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবাসী শ্রম বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান টেকসই রাখতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে শৃঙ্খলা ও দায়িত্বশীলতা এখন অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হয়ে উঠেছে।











