বিদেশেও রফতানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প

 

বিদেশেও রফতানি হচ্ছে টাঙ্গাইলের বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প  হচ্ছে বিদেশেও

নিজস্ব প্রতিবেদক: টাঙ্গাইল জেলায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের তৈরি হস্তশিল্প ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে এসব পণ্য।

বংশ পরম্পরায় দেলদুয়ারের বর্ণী, প্রয়াগজানী ও কোপাখী গ্রামে বাঁশের তৈরি হস্তশিল্পের কাজ করে আসছেন তারা।

এ শিল্পের প্রধান উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন দেলদুয়ারের অনেকে। এতে করে বেকারদের জন্য তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের।

ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের শিল্প সম্প্রসারণ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্মকর্তা।

গ্রামটি ঘুরে জানা যায়, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বর্ণী, প্রয়াগজানী ও কোপাখী গ্রামের ২০০ পরিবার এ কাজে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

বংশ পরম্পরায় এ পেশা আঁকড়ে ধরে আছে অনেক পরিবার। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতে বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ বাঁশ ও বেত দিয়ে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী তৈরি করছেন।

তাদের মূল উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করছেন বারপাখিয়া গ্রামের ছেলে আর্ন্তজাতিক কারুশিল্পী নূরুন্নবী।

তিনি বর্ণী দক্ষিণ পাড়ায় “নূরুন্নবী ব্যাম্বো ক্রাফট” নামে একটি কারখানা গড়ে তুলেছেন।

আরও পড়ুন- টাঙ্গাইলে ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ

সেখানে প্রায় ৬০/৭০ জন নারী পুরুষ প্রতিদিন কাজ করেন। এছাড়াও প্রায় শতাধিক পরিবার বাড়িতে বসে কাজ করেন।

বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ধরনের বাস্কেট, টেবিল ল্যাম্প, প্লেস ম্যাট, বিভিন্ন ধরনের ট্রে, মোড়া, ফলের ঝুড়ি, টিস্যু বক্স, গয়নার বাক্স, জানালার পর্দা, ওয়েস্ট পেপার ঝুড়ি, ড্রিংকস বোতলের ঝাড়সহ নানা ধরনের সৌখিন পণ্য তৈরি করছেন।

স্থানীয় বাজার ছাড়াও রাজধানী ঢাকার বড় বড় শপিংমল ও বিভিন্ন অনলাইন ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন রফতানিকারকদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তার বাঁশ বেতের তৈরি হস্তশিল্প রফতানি হচ্ছে।

এই গ্রামের অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের তৈরি হয়েছে। প্রায় সবাই এখন বাঁশ-বেতের কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন। আর্থিকভাবেও হচ্ছেন সাবলম্বী।

শ্রমিকদের বক্তব্য

কারখানা শ্রমিক রহমান মিয়া বলেন, আমাদের তৈরি পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ দেশের বাইরে পাঠিয়ে থাকে।

কিন্তু আমারা যে পরিশ্রম করি সে অনুযায়ী পয়সা পাই না। গড়ে একজন ৮-১০ হাজার টাকার মতো আয় করি।’ এদিয়েই আমারদের সংসার চলে।

নারী শ্রমিক রাশেদা আক্তার বলেন, ২০ বছর ধরে এ কাজ করছি। পরিবারের কাজ শেষে বিভিন্ন ধরনের বেতের কাজ করি।

আমাদের কাজ হচ্ছে বুনানো, চাপানো, পরিচ্ছন্নসহ আমরা হালকা কাজ করি। এখানে কাজ করে আমার ছেলে মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছি আমি।

আরও পড়ুন- ট্রাইবেকারে ট্রফি পেলো দুর্মর-২২

উদ্যোক্তার বক্তব্য

কারু শিল্পী নূরুন্নবী জানান, নিজেদের বাপ দাদার পেশা ধরে রাখতে বাঁশ, বেতশিল্পের সঙ্গে কয়েকশ পরিবার জড়িত রয়েছি।

বংশ পরম্পরায় ১৯৯০ সাল থেকে তিনি হস্তশিল্পের কাজ করছেন। ২০০৪ সালে তিনি এই কারখানাটি গড়ে তুলেন।

২০০৪ সাল থেকে বিভিন্ন রফতানিকারকদের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে একশতরও বেশি অর্ডার পেয়েছেন এবং তা সঠিকভাবে ডেলিভারিও করেছেন।

যখন অর্ডার বেশি হয় তখন কারখানায় ১০০-১২০ জনের বেশি কর্মচারী কাজ করেন।

বেত-বাঁশের বিভিন্ন প্রকার জিনিস সম্পূর্ণ হাত দিয়ে তৈরি করে থাকি। কোনো ধরনের মেশিন দিয়ে তৈরি হয় না।

সরকার যদি আমাদের মেশিন ও মেশিন ব্যবহারের জন্য ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করতো তাহলে আরও মানসম্পন্ন জিনিস আমরা বিদেশে রফতানি করতে পারতাম।

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন কর্মকর্তার বক্তব্য

জেলা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. জামিল হুসাইন বলেন, ঐতিহ্যবাহী বাঁশ-বেতের শিল্পর সম্প্রসারণ করতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হবে।