বিশ্বনন্দিত বিচারপতি ড. রাধা বিনোদ পালের প্রতিষ্ঠিত পৌণ একশো বছরের পুরাতন আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি অন্তহীন অবহেলায় জর্জরিত। উপজেলার সদ্য প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বহুতল বিল্ডিং প্রতিষ্ঠিত হলেও ঐতিহ্যবাহি এ বিদ্যালয়ে গত এক শতাব্দীতেও লাগে নি উন্নয়নের ছোয়া। ক্ষমাহীন বিবর্ণ চিহ্নের ন্যায় সর্বত্র যুগসঞ্চিত অবহেলার স্মারক হিসেবে এ প্রতিষ্ঠানটি টিকে আছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক আদালতের বিশ্বনন্দিত বিচারপতি, জাতিসঙ্ঘের আইন কমিশনের সাবেক সভাপতি ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ড, রাধা বিনোদ পাল ১৯২৫ সালে হাটবোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। সে সময় বিদ্যালয়টির নাম ছিল মাইনর ইংলিশ স্কুল (এম, ই স্কুল)। সন্তানের মতই এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি তিনি অনেক পরিশ্রমে তিল তিল করে ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীনকে সাথে নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন। এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠাকালীন তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে তাঁর প্রাণ সংশয়ের মত ঘটনা ঘটেছিল বলে জানা যায়। তৎকালীন জমিদার তাঁকে গুলি করে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিলেন। খড়ের স্কুল ভবন রাতের আঁধারে আগুন লাগিয়ে বার বার পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি থেমে যান নি। তার অনমনীয় মনোভাবের কাছে শেষ পর্যন্ত হার মানে সে সময়ের প্রতিক্রিয়াশীল সমাজ। যাত্রা শুরু হয় এতদাঞ্চলের জ্ঞানের বাতিঘর হাটবোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের।
হাটবোয়ালিয়ার সাথে তার ছিল নাড়ির টান। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি হাটবোয়ালিয়ায় ছুটে যেতেন। তিনি এবং অনুজ ডাক্তার রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ দুজন জীবনের সবটুকু আলো উজাড় করে ঢেলেছেন নিভৃত পল্লি হাটবোয়ালিয়া গ্রামাঞ্চলকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে। পরবর্তিতে প্রাক্তন এমএলএ রিয়াজ উদ্দীন আহমেদ প্রতিষ্ঠা করেন মুসলিম হায়ার ইংলিশ স্কুল। কয়েক বছরের মাথায় দুটি বিদ্যালয় একীভূত করা হয়। জাপানের টোকিও-তে আন্তর্জাতিক আদালতের বিচারপতি হিসেবে যোগদানের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত তিনি একীভূত বিদ্যালয়ের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। শুধু কী দায়িত্ব পালন! কলকাতা থেকে ছুটে গিয়ে বিদ্যালয়ে ক্লাস নিতেন।
হাজার বছরের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী রাধা বিনোদ পাল প্রতিষ্ঠিত পৌণে ১ শ বছরের পুরাতন এই বিদ্যাপীঠ দারুণ অবহেলিত। স্কুল ভবন বলতে রয়েছে বহু পুরাতন টিনের শেড। তাতেও বহু বচর পড়ে নি যত্নের ছোয়া। রয়েছে পর্যাপ্ত ক্লাসরুমের অভাব। প্রচন্ড গরমে কোমলমতি শিক্ষার্থিদের ক্লাস করতে প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে আসে।
অথচ, এই বিদ্যালয় থেকে গত পৌণে ১ শ বছরে মনোজ কুমার পালের মত বিশ্ববিখ্যাত নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানী, প্রায় দেড় ডজন আর্মি অফিসার, সচিব , নামজাদা অধ্যাপকরা শিক্ষা লাভ করেছেন।
হাটবোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি শরিফুজ্জামান লাকী জানান, কয়েক দিন পূর্বে তিনি বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। সকলের সহযোগিতা নিয়ে তিনি এ বিদ্যালয়ের শ্রীবৃদ্ধি করতে আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নেবেন।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন আলী জানান, বিশ্বজনীন ব্যক্তিত্বের স্মৃতিধন্য বিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে চেষ্টা করবেন বুলে প্রতিশ্রুতি দেন।
সূত্র: samprotikee.com