বেতন-ভাতা সংকটে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা

ডেস্ক নিউজ : করোনা মহামারির এই দুর্যোগকালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শহরভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলছে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা।

শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ধরে রাখার জন্য এটি মন্দের ভালো একটি ব্যবস্থা। যদিও এতে অর্জিত হচ্ছে না সরাসরি ক্লাসের পরিপূর্ণ সুফল।

তাই পরিতৃপ্ত হচ্ছে না ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক। টিউশন ফি দিতে চাচ্ছেন না অভিভাবকরা। তাছাড়া করোনা মহামারির বিরূপ প্রভাবে চরম অনটনে আছেন অনেক অভিভাবক।

তাই অনটনে পড়ে গেছে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিশেষ করে নন-এমপিও বা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট সর্বাধিক।

প্রতিষ্ঠানের অর্থাভাবে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ হয়ে আছে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনভাতা। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেও পড়েছে এর প্রভাব। চরম সংকটে দিনাতিপাত করছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।

সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, সচ্ছল প্রতিষ্ঠানগুলোও এই দুর্দিনে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে চাচ্ছে না, দিচ্ছে না।

এমন অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের ফান্ডে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার পরও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করে দিয়েছে অথবা আংশিক দিচ্ছে।

অথচ বিভিন্নভাবে মেসেজ দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে টিউশন ও অন্যান্য ফি। শিক্ষার্থীরাও ওই বিশেষ বিশেষ প্রতিষ্ঠানে নিজের ভর্তি টিকিয়ে রাখার জন্য পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে সব ফি।

শিক্ষকরা পরিশ্রম করে অতিরিক্ত আয় করে, প্রাপ্যের অতিরিক্ত না নিয়ে, অতীতে জমা করেছেন বলেই তো সচ্ছল হয়েছে ওইসব প্রতিষ্ঠান।

তাদের তহবিলে জমা হয়েছে কয়েক লাখ থেকে কয়েকশ কোটি টাকা। মাসে মাসে অর্জিত হচ্ছে বিপুল অঙ্কের লাভ।

তারাই আবার নিচ্ছে সর্বাধিক সরকারি অনুদান ও প্রণোদনা।

তাছাড়াও সারাদেশে এমন অনেক স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা রয়েছে, যাদের টিউশন-ফি ছাড়াও আছে নিয়মিত আয়ের অনেক অনেক উৎস।

এই মহামারি করোনাকালেও প্রতিদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। শিক্ষকরা প্রতিদিন নিচ্ছেন অনলাইন ক্লাস আর কর্মচারীরা প্রতিদিন করছেন অফিস।

তাহলে প্রতিষ্ঠানের তহবিলে কোটি কোটি টাকা জমা থাকার পরও তারা বেতন-ভাতা পাবেন না কেন? অনাহারে, অর্ধাহারে থাকবেন কেন পরিবার-পরিজন নিয়ে?

এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? 

এ তো চরম বিচারহীনতা! শিক্ষা প্রশাসনের অবশ্যই এগিয়ে আসা উচিত শিক্ষক-কর্মচারীদের এই দুর্দিনে।

তারা চাইলেই নিশ্চিত করতে পারে অন্তত সচ্ছল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা।

প্রশাসন ইচ্ছে করলেই একটি ফরম ছেড়ে দিয়ে জেনে নিতে পারে, কোন প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সচ্ছলতা কতটুকু?

কোন প্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষক-কর্মচারী কর্মরত? কর্মরত শিক্ষকর্মচারীদের কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কত বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে? কোন প্রতিষ্ঠানে বেতন-ভাতা দেয়া হচ্ছে না?

প্রশাসন প্রতিনিয়মিত অনলাইন ক্লাসের তথ্য নিচ্ছে, অ্যাসাইনমেন্টের তথ্য নিচ্ছে, অথচ শিক্ষকদের অসচ্ছলতার তথ্য নিচ্ছে না! কর্মের খবর নিচ্ছে, পারিশ্রমিকের খবর নিচ্ছে না! শিক্ষকদের জন্য এটি বড়ই পীড়াদায়ক বিষয়!

প্রতিষ্ঠানে টাকা থাকার পরও যারা নিয়মিত প্রাপ্য বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না তারা এই ই-মেইলে অবহিত করুন।

এরূপ একটি আদেশই এখন নিশ্চিত করতে পারে সচ্ছল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত হাজার হাজার শিক্ষক-কর্মচারীর ন্যূনতম জীবন ধারণ।

শিক্ষকরা তো শিক্ষা প্রশাসনেরই মাঠ পর্যায়ের কর্মী। তারা এখন সরকারি নিয়ম মেনে টিউশনি করেও কোনো টাকা আয় করতে পারছে না। এই মহামারিকালে, এই কঠিন দুঃসময়ে, তাদের বাঁচিয়ে রাখা তো সরকারি প্রশাসনের নৈতিক দায়িত্ব।

অধ্যক্ষ কিশলয় বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। সূত্র – ভোরের কাগজ। সম্পাদনা – অলক কুমার