ভূঞাপুর সংবাদদাতা: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে প্রেমের সম্পর্কের দাবী নিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সাথে সংঘর্ষের ঘটনায় দুইজন আহত হয়েছে।
এই ঘটনায় পশ্চিম ভূঞাপুর গ্রামের সাইফুল তরফদার ও বীরহাটি গ্রামের মনি আহত হয়েছে।
গত শুক্রবার (৪ আগষ্ট) রাত ১২টার দিকে ভূঞাপুর পৌরসভার পশ্চিম ভূঞাপুর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
এই ঘটনায় শনিবার পশ্চিম ভূঞাপুর এলাকার সুজা তরফদারের স্ত্রী জাহানারা বেগম বাদী হয়ে সোহাগসহ ৬ জনের নামে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। পরে অভিযোগটি রবিবার রাতে রেকর্ড ভুক্ত হয়।
ঘটনাক্রম
জানা গেছে, পশ্চিম ভূঞাপুর এলাকার সুজা তরফদারের মেয়ে শান্তা তরফদারের সাথে পৌরসভার বীরহাটি এলাকার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে সোহাগের সাথে মোবাইলে কথা বলার এক পর্যায়ে প্রেমের সর্ম্পকের তৈরি হয়।
পরে ওই মেয়ে ছেলেকে পরিবারে কাছে বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার কথা বলে।
এরপর সোহাগ তার বন্ধু ও আত্মীয় স্বজনদের মাধ্যমে মেয়ের বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।
কিন্তু মেয়ের পরিবার বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। পরে গত শুক্রবার বিয়ের প্রস্তাবের বিষয়ে ভূঞাপুর রেলওয়ে স্টেশনের মাঠে সালিশি বৈঠক হয়।
কিন্তু সেখানে কথা কাটাকাটি হওয়ায় দুই পক্ষই চলে যায়।
আরও পড়ুন- পুলিশকে টাকা না দেয়ায় মিথ্যা প্রতিবেদন দেয়ার অভিযোগ আওয়ামীলীগ নেতার
মেয়ের মায়ের বক্তব্য
শান্তার মা জাহানারা বেগম জানান, প্রতিনিয়ত মেয়েকে কলেজে আসা যাওয়ার পথে বিরক্ত এবং প্রেমের প্রস্তাব দিত সোহাগ।
পরে সোহাগ ও তার বন্ধু ইমরান চকদার বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ইমরানের সাথে আমার বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পরিচয় সেই সুবাদে তার সাথে ছেলে হিসেবে কথা বলি।
তবে প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় জোরপূর্বক মেয়ে তুলে নিয়ে বিয়ে করার হুমকি দেয়া হয়।
বিষয়টি মিমাংসার জন্য শুক্রবার রাতে সোহাগকে ফোন করে তার আত্মীয়দের নিয়ে আসতে বলি।
কিন্তু তার আত্মীয়রা না এসে সোহাগ তার বন্ধুদের নিয়ে আসে। কথা বলার এক পর্যায়ে সোহাগ বলে আপনার মেয়ের সাথে কথা বলাসহ প্রেমের সমস্ত কিছুর রেকর্ড রয়েছে।
পরে তার মিথ্যা কথাকে কেন্দ্র করে ভাগিনা শিপলুর সাথে তর্কাতর্কি হয়। পরে সোহাগ ও নয়ন দুইজনে বাড়িতে গিয়ে ঘরের দরজা ভেঙে মেয়েকে অপহরণের চেষ্টা করে।
এসময় তাদের ফেরাতে গেলে দেবর সাইফুলকে মারধর করে তার মাথা ফাটিয়ে দেয়।
এরপর শিপলুকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যায়। পরে আমার আত্মীয়স্বজনরা তাদের ধাওয়া করে।
প্রেমিক সোহাগের বক্তব্য
বীরহাটি গ্রামের সোহাগ জানান, শান্তার সাথে গত দুই বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
আমরা ফাস্টফুড ও রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গা ঘুরেছি।
নিয়মিত ভিডিও কলেও কথা বলেছি সব প্রমাণ আছে। আমি চাকরি করে যে টাকা উপার্জন করেছি সব টাকাই তার পিছনে ব্যয় করেছি।
দুই তিন মাস আগে একটি স্বর্ণের জিনিস উপহার দিয়েছি শান্তাকে। এলাকার সব মানুষই জানে তার সাথে আমার দীর্ঘদিনের প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে।
নিয়মিত তার বাড়িতে আমি গিয়েছি। তবে সম্প্রতি আরেকটি ছেলের সাথে শান্তার সর্ম্পক তৈরি হওয়ায় আমার সাথে তেমন কথা বলে না।
পরে তার সাথে কথা বলে বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠিয়েছি। কিন্তু এখন তারা আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি না।
ফোনে তাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আমাদের উপর হামলা করেছে। হাতুরি দিয়ে মফিস আমার সাথে থাকা মনিকে মাথায় আঘাত করে।
পরে দৌড়ে আমরা দুইজন সেখান থেকে পালিয়ে আসি। এরপর বন্ধু ইমরান চকদারের সহায়তায় হাসপাতালে ভর্তি করি মনিকে।
পৌর শহর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামলার আসামী ইমরান চকদার বলেন, শুক্রবার বিকেলে মেয়ের মা আমাকে ফোন করে ডেকে নিয়ে বিষয়টির সমাধান করার জন্য অনুরোধ করেন।
পরে সালিশি বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে তর্কাতর্কি হওয়ায় আমরা সেখান থেকে চলে আসি।
এরপর রাতে ওই ছেলেকে ডেকে নিয়ে মেয়ে পক্ষের লোকজন হামলা করে আহত করেছে।
অথচ আমি পৌর মেয়রের লোক হওয়ায় এমপির লোকজন আমাদের নাম দিয়ে মিথ্যা মামলা রেকর্ড করেছেন থানায়।
মামলার কোন সঠিক তদন্ত না করে ওসি একতরফা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দিয়ে মামলাটি রেকর্ড করেছেন।
আমরা রাজনৈতিকভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি।
প্রশাসনের বক্তব্য
সোমবার (৭ আগষ্ট) দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ভূঞাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরফান খান জানান, রবিবার রাতে মামলা রেকর্ড করা হয়েছে।
এতে প্রধান আসামী সোহাগসহ ৬জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ৩-৪জনের আসামী করা হয়েছে।
মেয়ের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন।