এখনও অনেক সরিষা চাষীর মধ্যে একটি ধারণা রয়েছে যে, সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ করার জন্য মৌ বক্স বসালে মৌমাছি সরিষা ফুলের রস খেয়ে ফেলে, সেজন্য ক্ষেতে সরিষার ফলন কম হয়। এই ধারণাটি সম্পূর্ণ ভুল। বরং সরিষা ক্ষেতে মধুর বক্স বসালে সরিষার ফলন আরো বেশি হয়। কারণ মৌমাছি মধু সংগ্রহের জন্য ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ায়। তখন মৌমাছির পা ও পাখার মাধ্যমে পরাগায়ন আরো বেশি হয়। পরাগায়ন যত বেশি হবে, ফলনও তত বেশি হবে। তাই সরিষা ক্ষেতে মধু চাষ করলে মধ্ওু পাওয়া যায়, সরিষার ফলনও বেশি হয়। কথাগুলো বলেন টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক।
এসময় তিনি বলেন, এতে করে সরিষা চাষী ও মধু চাষী দুইজনই লাভবান হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে দেশ। কারণ এই মধু রপ্তানিও হচ্ছে। এছাড়া মধু আহরণ করলে সম্পদে পরিনত হয়, না করলে ফুলেই শুকিয়ে যায়।
এসময় তিনি আরো বলেন, টাঙ্গাইলে এবার ৪৩ হাজার ২০ হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও ৪১ হাজার ৭০৫ হেক্টর জমিতে সরিষা বপন করা হয়েছে। আর সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৪ হাজার ৫৮০ মে. টন। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে তখনই, যখন প্রতিটি ফুলে মৌমাছি বসবে ও পরাগায়ন ঘটাবে। তা না হলে সম্ভব নয়।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার বক্স বসিয়েছে মৌ চাষীরা। তবে এই সংখ্যা ১০ হাজারের কাছাকাছি যাবে বলে আশা করছেন তিনি। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত মধু আহরণ করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার টন। তবে একশ টনের উপরে আহোরিত হতে পারে।
টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার সবকয়টিতেই সরিষা চাষ হয়। সবচেয়ে বেশি চাষ হয় নাগরপুরে, দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে মির্জাপুর। এরপর সদর, বাসাইল, দেলদুয়ার, কালিহাতী, ভ‚ঞাপুর ও গোপালপুরে। অন্যান্য উপজেলায় যৎসামান্য জমিতে সরিষা চাষ হয়ে থাকে।
নাগরপুরের বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, ফলন নষ্ট হবে ভেবে সরিষা ক্ষেতে মৌ বাক্স বসাতে দেইনি। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ ভাগ ফলন বাড়ে। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে সব ধরনের শস্যের ফলন বৃদ্ধি করে। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করেছি। মৌ চাষের ফলে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বাণিজ্যিক মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন বলে জানান তারা।
সদর উপজেলার কয়েকজন মধু চাষী বলেন, মধুর বাজার মূল্য খুবই কম। সঠিক বাজার মূল্য পেলে মধু চাষ বাড়বে বলে জানান তারা।