নিজস্ব প্রতিবেদক : বছর না যেতেই ভেঙে ফেলা হলো টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘর। এ
রআগে বড় বড় ফাটল, জীর্ণ দশা আর বসবাসের অযোগ্য হওয়াসহ নানা অনিয়মের সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সরেজমিনে পরিদর্শন করে উপজেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা পুনরায় ঘরগুলো নির্মাণের আশ্বাস দেয় বাসিন্দাদের।
আশ্বাসের কয়েক দিন পর থেকে ওই ঘরগুলো ভেঙে পুনরায় নির্মাণের কাজ শুরু করে।
আরো পড়ুন – ঘাটাইলে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ফাটল, বিরাজ করছে আতঙ্ক
এদিকে, ঝড় ও রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ভেঙে ফেলা ঘরের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। এখনো নানা আতঙ্কে দিন কাটছে তাদের।
নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও নানা অনিয়মের কারণে ঘরগুলোর ওই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা যায়, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে উপজেলায় প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ে ২৭৬ টি ঘর বরাদ্দ দেয়া হয়।
তারমধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে গৌরিশ্বর এলাকায় ভূমিহীনদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হয় ৪৪টি ঘর। কিছুদিন না যেতেই ঘরগুলোতে দেখা দেয় ফাটল।
এনিয়ে অভিযোগ উঠে নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের। মাটির সমস্যার কথা বলে পাশ কাটিয়ে যায় প্রশাসন।
পরবর্তীতে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আশ্রয়ন কেন্দ্র পরিদর্শন করে তা মেরামতের ব্যবস্থা করেন।
কিন্তু কিছুদিন পরেই আবারো একই অবস্থার সৃষ্টি হয়।
আরো পড়ুন – সাগরদিঘি ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মসৃজন প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ!
এছাড়া দেখা দেয় বড় বড় ফাটল। খসে পড়তে থাকে পলেস্তার। সংবাদকর্মীদের কাছে দুর্দশার কথা তুলে ধরেন আশ্রয়ন কেন্দ্রের বাসিন্দারা।
তখন টনক নড়ে প্রশাসনের; ছুটে যান প্রশাসনের কর্তারা। আশ্বাস দেয়া হয় ঘর পুননির্মাণ ও সংস্কারের।
অপরদিকে, সংবাদকর্মীদের কাছে ঘরের বিষয় তুলে ধরায় নানা ধরণে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখানো হয় বাসিন্দাদের।
পরে যে সমস্ত ঘরে বড় বড় ফাটল, জীর্ণদশা আর বসবাসের অযোগ্য সে সব ঘর কয়েকদিন আগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ঝড় ও রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ভেঙে ফেলা ঘরের বাসিন্দারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া কেউ আশ্রয় কেন্দ্রের পাশে কোন রকম ছাপড়া তুলে বসবাস করছে আবার কেউ অন্যের আশ্রয় কেন্দ্রের ঘরের বারান্দায় বসবাস করছে।
ওই আশ্রয় কেন্দ্রের অন্যান্য ঘরগুলোতেও ফাটল থাকায় আতঙ্কে দিন কাটছে বাসিন্দাদের। পানি ও পয়ঃনিস্কাশন সমস্যাতো রয়েছেই।
আরো পড়ুন – সখীপুরে প্রায় বিবস্ত্র করে গৃহবধূকে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন, গ্রেফতার ১
ভূক্তভোগীদের কথা –
ঘর ভেঙে ফেলা আশ্রয় কেন্দ্রের বাসিন্দা মাজেদা বেগম জানান, মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে অনেক খুশি হয়ে ছিলাম।
কয়দিন পরেই বড় বড় ফাটল দেখা দেয়। খসে খসে পড়ে পলেস্তার। নতুন করে ঘর তৈরি করে দিবে বলে ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ঠিকমতো লোক কাজ করতে আসে না। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে গাছের তলায় ছাপড়া তুলে রইছি। খুব কষ্ট হইতাছে।
শরিফা বেগম বলেন, নতুন করে ঘর তৈরি করে দিবে বলে ভেঙে ফেলা হয়েছে। ভাঙার পর ঠিকমতো কাজও করতে আসে না লোকজন।
অন্যের ঘরের বারান্দা ও রান্না ঘরে রইছি, পোলাপান, গরু ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে খুব কষ্টে আছি।
খুকি বেগম বলেন, আমার ঘরে বড় বড় ফাটল। আতঙ্কে রয়েছি। অফিসার আইসা খুব রাগারাগি করলো। কাউকে যেন কিছু না বলি। ঝড়ের সময় দেয়াল ভেঙে পড়লে বাঁচমু নাতো।
কর্তৃপক্ষের কথা –
এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল বলেন, মাটির কারণে কয়েকটি ঘরে সমস্যা থাকায় তা ভেঙে পুননির্মাণ করা হবে।
এবিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনিয়া চৌধুরী মুঠো ফোনে বলেন, এই বিষয়ে আমরা টেকনিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
সেই টিমের রিপোর্টের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসক ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
মাটি কম্প্যাকশন ঠিক মতো হয়নি বলেই এই ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
তিনি আরো বলেন, ঘাটাইলের মাটির ধরণটাই এরকম। বৃষ্টি হলেই মাটি নরম হয়ে যায়; যার ফলে এধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। সম্পাদনা – অলক কুমার