“যমুনার পেটে গেল তাদের শেষ ঠিকানা”

নিজস্ব প্রতিবেদক : মুহুর্তেই যমুনার পেটে চলে গেলো শেষ ঠিকানাটাও।

কিছু আসবাবপত্র সরাতে পারলেও বাকি সব যমুনার পেটে চলে গেছে।

কোথায় যাবো, কি করবো, কি খাবো, কিভাবে চলবো? তাদের মনে হাজারো প্রশ্ন। মাথা গোঁজার জায়গাটুকুও  যে নেই।

কে সাহায্য করবে? সাহায্য করার মতোও কেউ নাই। এভাবে কথাগুলো বলছিলেন যমুনার ভাঙনে ভিটেবাড়ী হারা টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ভৈরববাড়ী গ্রামের গৃহবধু বাসিতন বেগম (৫৫)।

শুধু বাসিতন বেগম নয়, গত দুই দিনে তার মতো ৩৫টি বাড়ি যমুনার পেটে চলে গেছে; ঘরবাড়ি হারিয়ে শত শত মানুষ খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে।

ভাঙনের শিকার মানুষের অভিযোগ, ভাঙনের বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবগত করলেও তারা কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

স্থানীয় সূত্র জানায়, পানি বৃদ্ধির ফলে যমুনার চরাঞ্চলসহ টাঙ্গাইল সদর, নাগরপুর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইল উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করে অর্ধশতাধিক নতুন নতুন গ্রাম বন্যার কবলে পড়ছে।

সেই সাথে বিভিন্ন এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। ভাঙনের ফলে টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, ভূঞাপুর ও বাসাইলের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের শতাধিক বসতভিটা, মসজিদ, বাঁধসহ নানা স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা –

সরেজমিন কালিহাতী উপজেলার ভৈরববাড়ী ও আলীপুর গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, যমুনার পার ঘেষা প্রত্যেক বাড়ী মানুষ ঘর ও আসবাব পত্র সরানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে।

আবার অনেকেই ঘর ও আসবাব পত্র সরিয়ে অন্যের জমিতে রেখে দিয়েছে। কেউ কেউ নৌকা করে আসবাব পত্র দূরের আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে রেখে আসছে।

প্রতিটি মুহুর্ত যমুনার পাড়ের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে পার করছে। অনেকেই নাওয়া খাওয়া ভুলে রাত দিন কাজ করছে। কারও কারও ভবিষ্যত ঠিকানা কোথায় হবে সেটিও জানা নেই।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগ –

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল খালেক বলেন, গত দুইদিনে মুহুর্তের মধ্যেই ভৈরববাড়ী এলাকার অন্তত ৩৫টি বাড়ি যমুনার গর্ভে চলে গেছে; অনেকেই আসবাবপত্র সরানোর মতো সময়ও পায়নি। অনেকের দুই তিনটি করে ঘর যমুনায় ভেসে গেছে।

বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বার বার অবগত করেও কোন সুরাহা হয়নি। চলতি মৌসুমে আড়াই শতাধিক ঘরবাড়ি যমুনায় বিলীন হয়েছে।

এ ছাড়াও পাশ্ববর্তী আলীপুর গ্রামসহ আশে পাশের গ্রামে যমুনার ভাঙনে হুমকির মুখে থাকা শতাধিক ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

ভৈরববাড়ী গ্রামের জোয়াহের আলী বলেন, বিগত বছর বাড়ির এক পাশ থেকে ভাঙন শুরু হতো। এখন শুধু নিচের দিকে দেবে যায়।

গতকাল মুহুর্তের মধ্যেই আমার বসত ভিটা দেবে গেলো। আমার পাঁচটি ঘরের মধ্যে দুটি ঘর সরাতে পেরেছি; বাকি তিনটি ঘর যমুনায় ভেঙ্গে গেছে।

আমরা সরকারি কোন অনুদান পাইনি। অনুদানের সরকারি চাল, ডাল ও টাকা আমরা চাই না। আমরা স্থায়ী বাঁধ চাই।

একই গ্রামের মহর মিয়া বলেন, এ পর্যন্ত পাঁচ বার বাড়ি ভেঙ্গে যমুনা চলে গেছে। এখন আর থাকার কোন জায়গা নেই। ঘর ভেঙ্গে অন্যের জমিতে রেখেছি।

কোথায় যাবো, কি করবো? তার কোন নিশ্চয়তা নেই। আমাদের স্থায়ী বাঁধের আশ্বাস দিলেও আমরা এখনও পাইনি। স্থায়ী বাঁধ হলে আমরা আর ঠিকানাহীন হতাম না।

কালিহাতীর দূর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, গত দুই দিনে ৩৫টির উপরে ঘরবাড়ি যমুনায় চলে গেছে।

পানি বাড়ায় আমার ইউনিয়নে সব কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। শত শত ঘরবাড়ি হুমকির মুখে রয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড অবগত করলেও তার ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরের কথা ভাঙন কবলিত এলাকার ভাঙন রোধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

কর্তৃপক্ষের বক্তব্য – 

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বন্যায় ভাঙন কবলিত ৯০ পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। সম্পাদনা – অলক কুমার