যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান, বালু খেকোরা আতঙ্কে!

যমুনায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান

ভূঞাপুর প্রতিনিধি : দীর্ঘদিন ধরে চলমান যমুনা নদীর চর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে মেতেছে প্রভাবশালী বালুখেকো চক্র।

তারা অবাধে নিষিদ্ধ বাংলা ড্রেজার ও ভেকু (মাটি কাটার যন্ত্র) বসিয়ে দিন-রাত বালু উত্তোলন ও বিক্রি করছে।

এসব বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করছেন উপজেলা প্রশাসন। প্রভাবশালী বালুখেকোরা কোন ছাড় পাচ্ছে না।

অভিযানে বালুখেকো মূল হোতারা পালিয়ে গেলেও গুণতে হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ, টানতে হচ্ছে মামলার ঘানি।

গত ডিসেম্বর ও চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কমপক্ষে ৮-১০ দিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়েছে।

এতে মোট ৯ লাখ টাকা অর্থদন্ড এবং একটি মামলাও দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) বিকালে উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়নের জগৎপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।

ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান পরিচালনা করেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না রহমান জ্যোতি

এরআগে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ী এলাকায় অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান চালিয়ে ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড করে।

সেসময় অভিযান পরিচালনা করেন – উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বেলাল হোসেন

গত মাসে একই এলাকা থেকে আরও ১ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়।

বালু উত্তোলন বন্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের কারণে অসাধু বালু ব্যবসায়ীদের মাঝে অর্থদন্ড ও মামলার আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগসমুহ :

সরকারি দলের কতিপয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অসাধু বালুখেকোরা ক্ষমতার দাপটে জমি মালিকদের জিম্মি করে শুকনো মৌসুমে অবাধে বালুমাটি উত্তোলন ও বিক্রি করে।

অবৈধ বালু উত্তোলন কর্মকান্ড বাঁধা দিতে গেলে তারা মারধর ও হয়রানির শিকার হয়। বালুখেকোদের ভয়ে কথা বলতে কেউ সাহস পান না।

বালু উত্তোলন বন্ধে একাধিকবার লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা।

এদিকে, বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে ঘরবাড়ি-বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির ও রাস্তা-ঘাটসহ নানা স্থাপনা নদী গর্ভে চলে যায়।

শুধু তাই নয়, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব এলাকায় প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক জোনে বাড়ছে নদীর গভীরতা, ভূঞাপুর-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের গাইড বাঁধ পড়েছে হুমকির মুখে।

প্রশাসনের কাছে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানায় ভুক্তভোগীরা।

প্রশাসনের কথা : 

এ ব্যাপারে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না রহমান জ্যোতি জানান, এ উপজেলাটি যমুনা নদী চরাঞ্চল বিধৌত।

শুকনো মৌসুমে আবাদি জমির চর জেগে ওঠে।

এসব আবাদি জমিতে বালু ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু বিক্রি করে আসছে।

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ পেয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে জেলা প্রশাসক মহোদয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের নির্দেশক্রমে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ অভিযান চালানো হচ্ছে এবং অর্থদন্ডসহ অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মামলাও দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. বেলাল হোসেন জানান, ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে গত ডিসেম্বর ও চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে উপজেলার গোবিন্দাসী, নিকরাইল ও অর্জুনা ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করা হয়েছে।

পরবর্তীতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়মিত অভিযান ও পরিচালনা করা হয়।

এতে কমপক্ষে ৮-১০ টি অভিযানে মামলাসহ ৯ লাখ টাকা অর্থদন্ড করা হয়েছে।

একইসাথে অবৈধ বালু উত্তোলন থেকে বিরত থাকার শর্তে মুচলেকা নেওয়া হয়েছে।

আবাদি জমি কেটে বালু উত্তোলন বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত থাকবে। সম্পাদনা – অলক কুমার