রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই আমরা চড়েছিলাম পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে ছুটে চলা এক বাসে। রাস্তার এক পাশে গভীর খাদ, অন্য পাশে মেঘ ও পাহাড়ের মিলন—এভাবেই পৌঁছাই পাহাড়, নদী ও মেঘের অপূর্ব সৌন্দর্যের জেলা বান্দরবানে। তিন দিনের এই যাত্রায় আমাদের গন্তব্য ছিল লামা উপজেলা, মাতামুহুরী নদী এবং দ্বিতীয় সাজেক নামে পরিচিত মিরিঞ্জা ভ্যালি।
প্রথম দিন:
রিসোর্ট, পাহাড়ি গ্রাম ও ঝিরিপথের ট্র্যাকিং ঢাকা থেকে হানিফ বাসে ১১ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাই লামা বাস টার্মিনালে। সেখান থেকে পাহাড়ের চূড়ায় একটি রিসোর্টে ওঠা মাত্রই মিলল প্রকৃতির অতুলনীয় সৌন্দর্য। সকালের নাস্তার পর বেরিয়ে পড়ি কাছের পাহাড়ি গ্রাম ও ট্র্যাকিংয়ে। বৃষ্টিভেজা পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে মেঘের সঙ্গে লুকোচুরি আমাদের রোমাঞ্চ আরও বাড়িয়ে দেয়।
পরে ঝিরিপথ ধরে যাত্রা শুরু করি। দুই পাশে উঁচু পাহাড়, উপরে ঝিঁঝিপোকার শব্দ আর নিচে ঠান্ডা পানির স্রোত—নেটওয়ার্কবিহীন সেই তিন ঘণ্টার সফর যেন ছিল এক নিখুঁত প্রাকৃতিক নিরালা। সন্ধ্যায় ফিরে রিসোর্টে বারবিকিউ আর আড্ডায় জমে ওঠে রাতের আসর।
দ্বিতীয় দিন:
লামা বাজার ও মাতামুহুরী নদী পরদিন সকালে ঘুরে দেখি লামা বাজার। খাই পাহাড়ি ফল আর স্থানীয় খাবার। এরপর নৌকায় করে যাত্রা শুরু মাতামুহুরী নদীতে। দুই পাশের খাড়া পাহাড়ের মাঝ দিয়ে আঁকাবাঁকা নদী বয়ে চলেছে—দৃশ্য যেন সিনেমার মতো। তবে সাদা পাথরের পাশে এক পর্যটক নিখোঁজ হওয়ায় যাত্রা মাঝপথে থেমে যায়। আমরা ফিরে যাই ‘রিভার হিল রিসোর্টে’ এবং সেখান থেকেই উপভোগ করি নদী ও পাহাড়ের নৈসর্গিক রূপ।
তৃতীয় দিন:
মেঘের দেশ মিরিঞ্জা ভ্যালি তৃতীয় দিনের গন্তব্য ছিল মিরিঞ্জা ভ্যালি—যা আজ ‘দ্বিতীয় সাজেক’ নামে জনপ্রিয়। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে শুভ্র মেঘের নাচন—মনে হচ্ছিল, হাত বাড়ালেই মেঘ ছোঁয়া যায়। বৃষ্টির কারণে পুরো পথটুকু আমাদের ট্র্যাকিং করে উঠতে হয়। রাতে পাহাড়ের ওপরে গিটারের সুর আর নীরবতার মিশেলে কাটে এক জাদুকরী সময়।
শেষ দিন:
মেঘ ছুঁয়ে ঝর্ণায় ভিজে ভোরবেলা রুমের বারান্দায় দাঁড়াতেই দেখি মেঘ এসে থম থমিয়ে আছে ঠিক সামনে। এরপর হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই একটি পাহাড়ি ঝর্ণায়। বরফঠান্ডা পানিতে কয়েক মিনিটেই মুছে যায় সব ক্লান্তি। মনে হলো—প্রকৃতি যেন নিজ হাতে আমাদের জন্য এ যাত্রা সাজিয়ে রেখেছিল।