সাততলা ভবন উচ্ছেদের মধ্যদিয়ে তৃতীয় দফায় লৌহজং নদী উদ্ধার অভিযানে নেমেছে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসন। টাঙ্গাইল শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া লৌহজং নদীর তীরে এই সাততলা ভবন উচ্ছেদের কাজ শুরু হয়েছে। তিন বছর উদ্ধার কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর সরকারের নির্দেশনায় মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে আবারও নদী দখলমুক্ত করতে উদ্ধার অভিযানে নামে কর্তৃপক্ষ।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে মঙ্গলবার সকালে সমন্বিতভাবে নদী দখল করে গড়ে ওঠা সাততলা বিশিষ্ট একটি ভবন উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে নদী উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বেলা ১২টার দিকে পৌরসভার বেড়াডোমায় সভার আয়োজন করে উচ্ছেদ অভিযানের উদ্বোধন করা হয়।
বিগত ২০১৬ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেনের উদ্যোগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও জনসাধারণের সম্পৃক্ততা ঘটিয়ে নদীর দখল-দূষনমুক্ত করার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়। সে সময় স্বতস্ফূর্তভাবে নদী তীরবর্তী মানুষ তাদের স্থাপনা ও ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করে। কিছু কিছু ঘরবাড়ি ও স্থাপনা স্থানীয় প্রশাসন সমন্বিত উচ্ছেদ অভিযানের মাধ্যমে নদীর দুই তীর উদ্ধার করা হয়। প্রায় দুই কিলোমিটার অংশে দু’পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর জেলা প্রশাসক মো. মাহবুব হোসেন বদলী হয়ে যান। উনার বদলী হওয়ার পর লৌহজং নদী দখল-দূষনমুক্ত অভিযান বন্ধ হয়ে যায়।
পরে ২০১৮ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. নুরুল আমিন বার বার নদীর দখল-দূষন পরিদর্শন করেন এবং এক পর্যায়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেন। কিন্তু তিনিও বদলী হয়ে গেলে নদী উদ্ধার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আবার এ অভিযান শুরু করা হলে টাঙ্গাইল পৌর মেয়রের বাঁধায় আবার তা বন্ধ হয়ে যায়।
টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে প্রকাশ, সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক নদীর দুই তীরের দশ মিটার বা ৩৩ ফুট করে দখলমুক্ত করার জন্য চলতি মাসের গোড়ার দিকে চিহ্নিতকরণ কর্মসূচি শুরু করা হয়। পরে মানবিক কারণে পানি উন্নয়ন বোর্ড দুই তীরে ২০ ফুট করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য চিহ্নিত করে।
প্রকাশ, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঢালান-শিবপুর থেকে মির্জাপুরের বংশাই পর্যন্ত প্রায় ৭৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক সময়ের খরস্রোতা এই লৌহজং নদী। নদীটি শহরের অংশে প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বয়ে গেছে। শহরের ওই ১০ কিলোমিটার অংশের দু’পাশে হাজার হাজার বাড়িঘর ও অবৈধভাবে স্থাপনা গড়ে ওঠায় দখল-দূষণে বর্তমানে নদীটি সরু খালে পরিণত হয়েছে। অথচ এক সময় এই নদী দিয়ে বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, পানশী নৌকা চলাচল করত। শহরের বিখ্যাত আমঘাট থেকে কলকাতা ও লন্ডনের সাথে নৌপথে বাণিজ্যিক যোগাযোগ রক্ষায় লৌহজং নদীর অপরিসীম ভূমিকা ছিল।