নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ষার সময় মানুষকে খাবার, শীতের সময় মানুষকে শীতবস্ত্র নিয়ে মানুষের পাশে থাকতে দেখেছি আমার স্বামীকে।
তিনি সারাজীবন মানুষের জন্য রাজনীতি করে গেছেন। মানুষের বিপদে আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানো ছিলে নেশা।
কথাগুলো বলছিলেন ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নারী প্রার্থী নার্গিস বেগম।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমার স্বামী এই ভ‚ঞাপুরের মানুষকে ভালোবাসতেন। আমি আমার স্বামীর ভালোবাসার মানুষের সাথেই বাঁচতে চাই।
আরো পড়ুন – আওয়ামী লীগ ও সিদ্দিকী পরিবারের যুদ্ধে উত্তপ্ত কালিহাতী
নার্গিস বেগম একজন সুগৃহিনী, দুই সন্তানের মা, একজন রাজনৈতিক কর্মী, একজন সমাজ সেবক, একজন স্বপ্নদ্রষ্টা।
তিনি স্বপ্ন দেখেন সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের, তিনি স্বপ্ন দেখেন সাধারণ গরীব-দুখী মানুষের ভাগ্যন্নোয়নের।
তিনি ১৯৭৮ সালে টাঙ্গাইল গার্লস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, কুমুদিনী সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮০ সালে এইচএসসি ও ১৯৮২ সালে স্নাতক সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে তিনি সরকারি সা’দত কলেজে বাংলা বিভাগ থেকে স্নাতোকোত্তর সম্পন্ন করেন। এই সময়ের মধ্যে ১৯৮৪ সালে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
রাজনীতিতে প্রবেশ –
১৯৮৪ সালে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পরই স্বামী আব্দুল হালিমের হাত ধরে তার রাজনীতিতে প্রবেশ করেন তিনি।
রাজনীতিতে প্রবেশের পর ওই বছরই তিনি ভূঞাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হন।
এবিষয়ে নার্গিস বেগম বলেন, সেই সময় মহিলাদের রাজনীতিতে আসা খুবই কঠিন ব্যাপার ছিলো।
আমার স্বামী আমাকে রাজনীতিতে হাতে খড়ি দেন। আমাকে উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হই।
আদর্শ মা ও গৃহিনী –
বিয়ের পর থেকেই স্বামীর সাথে রাজনৈতিক সহচর হলেও তিনি দুই সন্তানের জননী।
তিনি তার দুটি সন্তানকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেছেন।
ছেলে স্ট্যাম্পফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসী বিভাগ থেকে অনার্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেন।
আর মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকোলজি (মনোবিজ্ঞান) বিষয়ে পড়াশোনা করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
পরবর্তীতে তিনি বিবাহজনিত কারণে তিনি সেই চাকুরি ছেড়ে দেন।
টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে দুইটি উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে দুইজন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান নার্গিস বেগম।
পুরুষ প্রার্থীদের পাশাপাশি চেয়ারম্যান পদে অংশ নিয়ে সারা ফেলেছেন এই নারী প্রার্থী।
আগামী ২১ মে মঙ্গলবার দ্বিতীয় ধাপের ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে প্রাপ্ত –
টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে মোট ৫১ জন প্রার্থী হয়েছেন। গত ৮ মে প্রথম ধাপে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
ভূঞাপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে একমাত্র নারী প্রার্থী নার্গিস বেগম।
তিনি বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তার স্বামী আব্দুল হালিম ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচিত হন।
২০২১ সালে আব্দুল হালিমের মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন নার্গিস বেগম।
কর্মজীবী নারী নার্গিস বেগম –
ভূঞাপুর উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি নার্গিস বেগম শমসের ফকির কলেজের সাবেক সহকারি অধ্যাপক।
নার্গিস বেগম জানান, গত আড়াই বছর চেয়ারম্যান হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন।
নিয়মিত উপজেলা পরিষদের সভায় অংশ নিয়েছেন, দাপ্তরিক কর্মকাণ্ডও করেছেন।
সেই সাথে উন্নয়ন মূলক সকল কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করেছেন।
পরিষদের দায়িত্বের পাশাপাশি রাজনৈতিক ও সামাজিক কাজেও সক্রিয় ছিলেন।
তিনি জানান, এর মধ্য দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন দায়িত্ব পেলে নারীরাও সফল হতে পারে।
আর এজন্যই তিনি এবারও চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।
নার্গিস বেগম বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ সব নেতাকর্মী আমাকে সমর্থন দিয়েছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভালো সারা পাচ্ছি। বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদি।
তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন নির্বাচনে নারীদের আরো বেশি অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, আগামী ২১ মে ভূঞাপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পাঁচজন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলা মোট ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৯৮ জন। এদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৩৩৮ জন পুরুষ ও ৮৩ হাজার ২৬০ জন মহিলা ভোটার।
এই উপজেলার ৬৭টি কেন্দ্রের ৪৮৭টি কক্ষে ভোট গ্রহণ করা হবে।