দুস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন ডিবি ওসি শ্যামল দত্ত

মানুষ মানুষের জন্য। আর সেটা যেভাবেই হোক না কেন। ঘটনার সূত্রপাত একটি হত্যা মামলার তদন্ত থেকে। ২০১৯ সালের জুলাই মাসের ৩ তারিখ দিবাগত রাতে দেলদুয়ার থানার ইসলামপুর পশ্চিম পাড়ার ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালক জন মিয়া (৪০) খুন হয়। বাসাইল বিলপাড়াগামী রাস্তার পাশে তার লাশ পাওয়া যায়।

এরপর নিহত জন মিয়ার স্ত্রী নার্গিস বেগম বাদী হয়ে বাসাইল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পর পর দুইবার তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন হওয়ার পর তদন্তের দায়িত্ব পরে ডিবি ওসি (দক্ষিণ) শ্যামল দত্তের উপর।

মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জন মিয়ার পরিবারের অবস্থার খোঁজ খবর নেন ডিবি ওসি। তখন তিনি জানতে পারেন, এক টুকরো পৈত্রিক ভিটে বাড়িই জন মিয়ার সম্বল। যেখানে সরকারের দেয়া একটি ঘরে তারা বসবাস করতেন। নেই কোন ফসলি জমি। ভ্যান চালিয়ে যা পেতেন, তাই দিয়েই সংসার ও এক ছেলে-দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাতেন। অভাব অনটনের সংসারে জন মিয়াই ছিল একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। নিহত জন মিয়ার স্ত্রীর সাথে কথা বলে জানতে পারেন, ওই ঘটনার পর থেকে প্রায় অনাহারেই দিন কাটছিলো তাদের। বড় ছেলে মো. আহাদ মিয়া (১৯) মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের ১ম বর্ষের ছাত্র, মেজ মেয়ে মোছা. রুপা আক্তার (১৪) পরাইখালী দাখিল মাদ্রাসা ও ছোট মেয়ে মোছা. আয়শা আক্তার (১০) স্থানীয় ইসলামপুর মাদ্রাসায় লেখাপড়া করে। অর্থাভাবে তাদেরও লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর ঠিক তখনই এই পরিবারের কাছে দেবদূতের মতো হাজির হন টাঙ্গাইল জেলা পুলিশের গোয়েন্দা (ডিবি-দক্ষিণ) শাখার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত।

এছাড়া জন মিয়া খুন হওয়ার পর তার ভাইয়েরা তার সেই এক টুকরো জমিও কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে ডিবি ওসি শ্যামল দত্ত সেই দ্বন্দ্বটিও মিটিয়ে দিয়ে নিস্কন্টক করে দেন নিহত জন মিয়ার পরিবারকে।

শ্যামল কুমার দত্ত ছেলে মেয়েদের বন্ধ হওয়া লেখাপড়া চালু করেন। ছেলে আহাদের কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে তার বেতন-ভাতা ফ্রি করে দেন। একই ভাবে নিহত জন মিয়ার মেয়েদেরও শিক্ষার দায়িত্ব নেন এই ওসি। তাদের বই, খাতা-কলম কেনার টাকাও দেন তিনি। এছাড়া চার সদস্যের পরিবারের খাওয়া-দাওয়ার খরচ সহ সকল প্রকার খরচের দায়িত্ব নেন ওসি শ্যামল দত্ত।

নিহত জন মিয়ার ছেলে বলেন, আমাদের তিন ভাইবোনের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আর কোনদিন লেখাপড়া করা হতো না। শুধু এই স্যারের জন্যই এখনো আমরা দুুমুঠো খেতে পারছি, লেখাপড়া করতে পারছি।

নিহত জন মিয়ার স্ত্রী ও মামলার বাদী নার্গিস বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমাদের পরিবারের জন্য উনি আশির্বাদ। আল্লাহ উনাকে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ উনার অনেক ভালো করবেন। এসময় নার্গিস বেগম জানান, করোনাভাইরাসের এই দূর্সময়ে কেউ আমাদের খোঁজ খবর না নিলেও তিনি আমাদের সব সময় খোঁজ খবর রাখছেন। এছাড়া এই রোজা শুরু হওয়ার আগেই তিনি সারা মাসের খাবার পাঠিয়ে দিয়েছেন।

এবিষয়ে জানতে চাইলে ডিবি (দক্ষিণ) ওসি শ্যামল কুমার দত্ত প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আমি একজন মানুষ হিসেবে একটি নিপীড়িত, দুস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর মামলাটি তদন্তনাধীন রয়েছে।