নিজস্ব প্রতিবেদক : তিন মুসলমানের ভোটার আইডিতে ফ্যামিলী কার্ডের পণ্য তুলছেন দুই হিন্দু পরিবার। এমন তথ্য প্রকাশ পেয়েছে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরে কাকুয়া ইউনিয়নের তিন মুসলমান ভোটারের আইডি কার্ড নম্বরে দাইন্যা ইউনিয়নের দুই হিন্দু পরিবারের ফ্যামিলী কার্ড হওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
এ ঘটনায় স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তোলাসহ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিত পরিবারগুলো।
সরেজমিন ঘুরে ও স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, টাঙ্গাইল সদর উপজেলা দাইন্যা ইউনিয়নে পরিবার (ফ্যামিলী) কার্ড সংখ্যা ১৩৫৬টি।
আরো পড়ুন – নৌকার পরাজিত প্রার্থীর’ উপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুরে টিসিবির মাধ্যমে তিন স্থানে ওই ইউনিয়নে পরিবার (ফ্যামিলী) কার্ডের পণ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়।
বিতরণকৃত পণ্য সামগ্রী মধ্যে ছিল- সয়াবিন তেল ২ লিটার, চিনি ২ কেজি আর ডাল ২ কেজি। তবে এ ইউনিয়নের অসংখ্য আবেদনকারী নামে ওই কার্ড ইস্যু না হলেও ডিলার পণ্য ব্যবসায়ী ওই দুই হিন্দু পরিবারের নামে পরিবার কার্ড ইস্যু হয়েছে ৩টি।
ওই কার্ডে পণ্য উত্তোলন নিয়ে স্থানীয়দের বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়; এ সময় প্রকাশ পায় কাকুয়া ইউনিয়নের তিন মুসলমান ভোটারের আইডি কার্ড নম্বরে ওই হিন্দু পরিবারের কার্ড ইস্যু হয়েছে।
ভূক্তভোগীদের অভিযোগ –
স্থানীয়দের অভিযোগ, দলীয়করণের ভিত্তিতে ওই পরিবার কার্ডগুলো বিতরণ করা হয়েছে বলে এমন সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এর ফলে আবেদন করেও প্রকৃত হতদরিদ্ররা ওই কার্ড না পেলেও স্থানীয় ধনী আর ব্যবসায়ীদের অনেকেই পেয়েছেন কার্ড; এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
দাইন্যা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিনমজুর আবুল কালামের অভিযোগ, পরিবার কার্ডের আবেদন করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি দিয়েছি।
তবে আমি এখনও কার্ড পায়নি। ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় অন্য ইউনিয়নের মুসলমানের ভোটার আইডি কার্ডে হিন্দু পরিবার গুলো পরিবার কার্ড পেয়েছে বলে জানান তিনি।
আরো পড়ুন – কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেও আবাসিকে শিক্ষার্থী খুন, শিক্ষক রিমান্ডে
ওই ইউনিয়নের আরফান, শশীসহ একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, দলীয়করণের মাধ্যমে পরিবার কার্ড গুলো করা হয়েছে।
এ কারণে ইউনিয়নের অসংখ্য হতদরিদ্র মানুষ আবেদন করেও পরিবার কার্ড গুলো পায়নি।
কাকুয়া ইউনিয়নের তিন মুসলমানের ভোটার আইডি কার্ডে তারা পরিবার কার্ড কিভাবে পেলেন এমন প্রশ্নে অভিযুক্ত ডিলার পণ্য ব্যবসায়ী তপন রায় বলেন, দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য তাদের ওই কার্ড করে দিয়েছেন।
তাদের আইডি কার্ডের পরিবর্তে ওই কার্ডগুলো তাদের দেয়া হয়েছে।
তবে কাকুয়া ইউনিয়নের ভোটার আইডি কার্ডে কিভাবে দাইন্যা ইউনিয়নে পরিবার কার্ড হলো সে বিষয়টি জানেন না কাকুয়া ইউনিয়নের ওমরপুর গ্রামের ৬৪৪০০৭২২৭২ নং ভোটার আইডি কার্ডধারী শান্ত সোনা খোকন, তালগাছি গ্রামের ৫৯৭১৪৯৫২৫৩ নং ভোটার আইডি কার্ডধারী রোকেয়া খাতুন আর ১৯৬৯৯১১৯৫১৯৪৭১৫৯৮ নং ভোটার আইডি কার্ডধারী শাজাহান মোল্লা।
আরো পড়ুন – স্কুলে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ৬ শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –
৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোতালেব হোসেন মাদারী বলেন, দলীয়করণের কারণে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও পরিবার কার্ডের জন্য আমাদের ইউনিয়নে আবেদন এসেছিল ১৮০০টি। তবে কার্ড এসেছে মাত্র ১৩৫৬টি কার্ড; এ কারণেও অনেকের নামে কার্ড হয়নি।
দাইন্যা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, পরিবার কার্ডের আবেদনের শুরু থেকেই এ সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে; এ কারণে অন্য ইউনিয়নের ভোটার আইডি থেকে আমার ইউনিয়নে কিছু পরিবার কার্ড হয়েছে।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন জানান, নামের তালিকাগুলো ইউপি চেয়ারম্যানগণ দিয়েছেন।
এছাড়াও পণ্য গুলো সুষ্ঠুভাবে বিতরণের দায়িত্ব তাদের। কেন আর কিভাবে এটি হলো সে ব্যাপারে চেয়ারম্যানের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্পাদনা – অলক কুমার