বিশেষ প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে দেড় শতাধিক একতলা নির্মাণাধীন ভবন নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কে দিচ্ছে শতাধিক একতলা ভবন নির্মাণের টাকা? এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
রাজধানীর উত্তরাস্থ কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি (কেজেআরসি) অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে এসব ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছে দাবি করা হলেও কেজেআরসি বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। ভবনের অর্থায়ন ও নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষের গোপণীয়তায় স্থানীয় পর্যায়ে চলছে জঙ্গী তৎপরতার নানা আলোচনা-সমালোচনা। আর ভবন নির্মাণের টাকা প্রাপকদের কাছ থেকেও জানা যাচ্ছে না কোন সদুত্তর।
সরেজমিনে জানা যায়, টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলায় ১৮২টি একতলা ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হবে। এরমধ্যে এলেঙ্গা পৌরসভায় ৫৩টি ভবন নির্মাণ করা হবে এবং ১৭টি ভবনের নির্মাণ কাজ চলছে। দো’তলা ফাউন্ডেশনে ৩৮ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৮ ফুট প্রস্থের ছাদসহ একতলা ভবনে তিনটি বেডরুম, একটি কিচেন, একটি ডাইনিং রুম, দরজা-জানালা, মেঝে টাইলস সম্বলিত ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এর বিপরীতে কুয়েত জয়েণ্ট রিলিফ কমিটিকে সংশ্লিষ্ট ভবন মালিককে তিন কিস্তিতে চার লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে মালিকদের কাছ থেকে ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার শর্তে ৬-৭ লাখ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। মালিকদের কাছ থেকে ওই টাকা কুয়েত জয়েন্ট রিলিফ কমিটি (কেজেআরসি) বগুড়ার প্রতিনিধি পরিচয়ে জনৈক আব্দুর রউফ ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার প্রতিনিধি পরিচয়ে মাহবুব আলম গোপণে সংগ্রহ ও ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছেন।
টাঙ্গাইলের উপশহর এলেঙ্গার এক টিনের দোকানের কর্মচারী মো. শরীফ খান, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব হাফেজ মাওলানা মুফতি সানোয়ার হোসাইন সাইফী, কালিহাতী উপজেলার সল্লা সমবায় উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাদেক আলী মোল্লা, এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের খান ট্রেডার্স নামক দোকানের কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন দুলাল তাদের স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ ও ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করছেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, যাদেরকে ভবন দেওয়া হচ্ছে তারা প্রায় সবাই আওয়ামী বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। মুসলমান ব্যতিত কাউকে ভবন দেওয়া হচ্ছেনা। গোপনে কিয়দংশ টাকা নেওয়া এবং ভবন নির্মাণে আর্থিক স্বচ্ছতা না থাকায় স্থানীয় অনেকেই ধারণা করছেন, ভবন নির্মাণের অর্থায়নে জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
এলেঙ্গা পৌরসভার মসিন্দা এলাকার শিপন সিকদার, শিল্পী মাষ্টার, বিপ্লব সিকদার, দেলোয়ার হোসেন দুলাল, রাজাবাড়ী এলাকার বজলুর রহমান সরকার, সাদেক আলী মোল্লা, হায়াতপুর এলাকার হায়দার আলীসহ ১৭ জনের বাড়িতে উল্লেখিত মাপের একতলা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে তাদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা এ বিষয়ে কেউ কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। স্থানীয় প্রতিনিধি পরিচয়দানকারী মো. শরীফ খান, হাফেজ মাওলানা মুফতি সানোয়ার হোসাইন সাইফী, সাদেক আলী মোল্লা, দেলোয়ার হোসেন দুলাল এ বিষয়ে বগুড়ার আব্দুর রউফ ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাহবুব আলমের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন।
বগুড়ার আব্দুর রউফ ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার মাহবুব আলম নিজেদেরকে কেজেআরসি’র প্রতিনিধি পরিচয় দিয়ে বলেন, কেজেআরসি’র এটা হতদরিদ্রদের পাকা ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার একটি প্রকল্প। হতদরিদ্ররা সাড়ে চার লাখ টাকা সংগঠনকে দিতে না পারায় মধ্যবিত্তরা এ সুযোগটা পাচ্ছে।
কালিহাতী উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, স্থানীয়রা ৫-৭ লাখ টাকা দিয়ে ১৫ লাখ টাকার একতলা ভবন পাচ্ছে- এটা অবশ্যই সুখবর। কিন্তু ভবন নির্মাণ ও টাকা লেন-দেনে গোপণীয়তা জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ভবন নির্মাণে অর্থের উৎস কী? এবং এতবড় অনুদান দোকান কর্মচারীর মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে কেন? এছাড়া ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়াই বলে দিচ্ছে এখানে জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা থাকা বিচিত্র নয়।
এলেঙ্গা পৌরসভার মেয়র নুর এ আলম সিদ্দিকী বলেন, একই মাপের একতলা ভবন নির্মাণের জন্য স্থানীয়দের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি বেশকিছু ভবনের প্ল্যান অনুমোদন দিয়েছেন এবং আরও বেশকিছু অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
কুয়েত জয়েণ্ট রিলিফ কমিটির(কেজেআরসি) টাঙ্গাইলের প্রতিনিধি মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, তারা সাধারণত মসজিদ নির্মাণে অর্থায়ন করে থাকেন। তিনি কেজেআরসি’র বাংলাদেশস্থ হেডঅফিসে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন- কেজেআরসি এ ধরণের কোন প্রকল্প গ্রহন করেনি।
এ প্রসঙ্গে টাঙ্গাইলের কালিহাতী সার্কেলের এএসপি রাসেল মনির বলেন, বিষয়টি অবগত হয়ে স্থানীয় প্রতিনিধিদের ডেকে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন তিনি। তারা কোন তথ্য প্রমাণাদি দেখাতে পারেনি। তবে আগামি ১৫দিনের মধ্যে তারা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সম্পাদনা – অলক কুমার