নিজস্ব প্রতিবেদক : গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সরকারি ভাবে এবছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেও টাঙ্গাইলে মেধা যাচাইয়ের নামে বৃত্তি পরীক্ষা আয়োজন করলেন সরকারি শিক্ষকরা।
শনিবার (৪ নভেম্বর) বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার নামে গোল্ড মেডেল প্রদানের নামে অনুমোদনবিহীন বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়।
আর এর মাধ্যমে বৃত্তি দেয়ার নামে চলছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অর্থ আত্মসাতের প্রতিযোগিতা। (বিস্তারিত পরের সংবাদে)
সকালে জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলায় এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
এতে প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণও করেছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ফরমপূরণ বাবদ ১৫০ টাকা নেয়া হয়েছে।
সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণ –
এর আগে গত ৮ আগস্ট নোট-গাইড আর কোচিং নির্ভর পড়াশোনা বন্ধ করতে এবং প্রতিদিন ক্লাসেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে সচিবালয়ের অনুষ্ঠিত শিক্ষা ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় সরকারি ভাবে এবছর প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সরকারি নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কতিপয় সরকারি শিক্ষকের গোল্ড মেডেল বৃত্তির নামে দশ লক্ষাধিক টাকা অর্থ বাণিজ্য করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিয়ম বর্হিভুত ওই গোল্ড মেডেল বৃত্তি বন্ধে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি মুলধারার টাঙ্গাইল জেলা শাখার নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা হয়েছে।
এর সভাপতি ঘাটাইলের চাঁনতারা দক্ষিণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এমরান হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সদর উপজেলার আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুনার রশিদ।
আবেদন জমা দেয়ার শেষ তারিখ বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর)। ১ম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেনি পর্যন্ত আবেদনের মূল্য ১৫০ টাকা।
পরীক্ষায় উপস্থিত শতকতরা ৮ ভাগ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করা হবে।
জেলা টেলেন্টপুল শতকরা এক ভাগ ও উপজেলা টেলেন্টপুল শতকরা দুই ভাগ ও সাধারণ গ্রেডে শতকরা পাঁচ ভাগ বৃত্তি প্রদান করার কথা রয়েছে।
জেলা প্রতি শ্রেণীতে প্রথম স্থান অর্জনকারীকে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গোল্ড মেডেল ও সনদ প্রদান করা হবে।
টেলেন্টপুল ও সাধারণ গ্রেড প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নগদ অর্থ, সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হবে। পরীক্ষা শেষে তিন দিনের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করার কথা রয়েছে।
আজ ৪ নভেম্বর শনিবার সকাল ১০ টা থেকে দেড় ঘন্টার উপজেলা ভিত্তিক বৃত্তি পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।
বাংলা-৩০, ইংরেজি ৩০, গনিত ৩০ ও সাধারণ জ্ঞান ১০ নম্বরে পরীক্ষা নেয়া হয়।
এ পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন সমন্বয়কারী হিসেবে কালিহাতীর হাসরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম তালুকদার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সদর উপজেলার আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুনার রশিদ ও সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাসাইলের বার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনির হোসেন খান।
তবে এরআগে গত ৮ আগস্ট সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ সভায় শিক্ষার্থীদের নোট-গাইড আর কোচিং নির্ভর পড়াশোনা বন্ধ করতে বলা হয়েছে।
প্রতিদিন ক্লাসেই মূল্যায়নের ব্যবস্থা করতে এ বছর প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
সংশ্লিষ্টরা যা বলেন –
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি গোল্ড মেডেল বৃত্তি পরীক্ষার সহকারী পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বাসাইলের বার্থা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনির হোসেন খান বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাইয়ের জন্য এর আয়োজন করা হলেও সরকারি শিক্ষক হয়ে এই বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করা আমাদের ঠিক হয়নি; ভবিষ্যতে এ ধরণের ভুল আর হবেনা।
জেলায় মোট কতজন অংশগ্রহণ করেছে সেটি আমি নিশ্চিত না। আমার বাসাইল উপজেলায় ৮৮০ জন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি টাঙ্গাইল জেলা শাখার মহিলা বিষয়ক সম্পাদক কামরুন্নাহার খান মুন্নি বলেন, ‘সরকারি চাকুরি বিধিমালা ১৭ (১) নম্বর ধারায় বলা আছে, ‘এই আইনের অন্য বিধান অনুসারে, কোনও সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্ব অনুমোদন ছাড়া কোনও ব্যবসায় জড়াতে পারবেন না।
অথবা দায়িত্বের বাইরে অন্য কোনও কাজ কিংবা চাকরি নিতে পারবেন না।’
সরকারি অনুমোদন ব্যতিত সরকারি চাকুরীজীবী শিক্ষকদের এ ধরনের অর্থ উত্তোলন ও বৃত্তি প্রদানের নামে ব্যবসা বানিজ্য সম্পূর্ণ বেআইনি।’
বৃত্তির আয়োজক কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সদর উপজেলার আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হারুনার রশিদ বলেন, আমরা সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাইনি।
শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মান সম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য এই আয়োজন করা হয়েছে।
দেড় ঘন্টায় শিক্ষার্থীদের মেধা যাচাই ও মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত হবে কিনা এমন প্রশ্নে হারুনার রশিদ আরও বলেন, আমরা তাদের একটু যাচাই করবো।’
জেলা শিক্ষক নেতারা যা বলেন –
জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. সহিনুর রহমান খান এর অভিযোগ, শিক্ষক হয়ে তারা যে অনৈতিক কাজ করছে; এটা মেনে নেয়া যায় না। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বনিক জানান, নিয়ম বর্হিভুত কর্মকান্ডে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।