বিএনপি ও যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, পুড়িয়ে মেরে ফেলার হুমকি

বিএনপি ও যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের বাসাইলে জমি ও ফসল রক্ষার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ দেয়ায় সংখ্যালঘু পরিবারের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।

বিএনপি ও যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে এই ঘটনা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনায় জ্ঞানমোহন মন্ডল ও গোপীনাথ মন্ডল নামে দুই ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

এই বিষয়ে ভূক্তভোগীরা থানায় অভিযোগ করতে গেলে সেখান থেকেও তাদের হুমকি প্রদান করে জোরপূর্বক ফেরত পাঠিয়ে দেয়ার অভিযোগ করেন তারা।

বাসাইল উপজেলার নাকাসিম গ্রামের আহত সংখ্যালঘু সনাতন সম্প্রদায়ের জ্ঞানমোহন ও গোপীনাথসহ ভূক্তভোগীরা এই অভিযোগ করেন।

মূল ঘটনা –

এসময় তারা বলেন, এলাকার প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী বিএনপি নেতা কাজী বাদল আমাদের জমির আমন ধানের উপর জোরপূর্বক মাটি বালি ফেলে।

এতে আমাদের সারাবছরের খাবারের সংস্থান নষ্ট হয়ে যায়।

এটা নিয়ে আমাদের এলাকার হিন্দু-মুসলমান সব বাড়ির মহিলারা ইউএনও এবং উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে একটি অভিযোগ দেয়।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসন কার্যালয় ঘটনার সত্যতা পায় ও সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন।

ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার পর বাদল বাহিনীর লোক আমাদের ওপর হামলা চালায়। এই হামলায় আমাদের দুইজনকে মারধর করে তারা।

হামলার পর আমরা থানায় মামলা করতে যাই। থানার সামনে আগে থেকেই বাদলের লোকজন উপস্থিত ছিল।

তারা আমাদের থানায় ঢুকতে বাঁধা দিয়ে বলে, “এখান থেকেই বাড়িতে যাবি, নাকি জবাই করে শ্মশানে পাঠাবো?” আমরা সেখান থেকে প্রাণ ভয়ে বাড়িতে চলে আসি।

পরে রাতে কাজী বাদলের ভাই বিএনপি নেতা কাজী শহীদ, কাশিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া আমাদের বাড়িতে এসে আমাদের শান্তনা দিয়ে যায়।

জানা যায়, ওইখানে জ্ঞানমোহন মন্ডলের ১০৪ শতাংশ, ফটিক হাজীর ৫৮ শতাংশ, গোপীনাথ মন্ডলের ২৫ শতাংশ, রূপচাঁন মিয়ার ১০০ শতাংশ, রায় মোহন মন্ডলের ৩০ শতাংশ, সুভাষ মন্ডলের দুই প্লটে ৮৫ শতাংশ, ফনি খাঁর ৭০ শতাংশ, নগর বাশির ২৫ শতাংশ, উকিন্দ্র মন্ডলের ৩০ শতাংশ, গজেন্দ্র মন্ডলের ৩০ শতাংশ, সেন্টু মিয়ার ৩০ শতাংশ, বাদল মন্ডলের ৩০ শতাংশ সহ আনুমানিক ১০ একরের অধিক জমির উপর বালি ফেলে জমিতে থাকা আমন ধান, বিভিন্ন সবজি সহ অন্যান্য ফসল বিনষ্ট করে ফেলে। যাতে করে ওই কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ভূক্তভোগীদের কথা –

ভূক্তভোগী জ্ঞানমোহন মন্ডল বলেন, বাদল বাহিনী গতকাল আমাকে মেরেছে, আজ তারা আমার ছেলেকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে গেছে।

আমি আমার পরিবার নিয়ে শঙ্কিত আছি। তারা যে কোন সময় আমাদের মেরে ফেলতে পারে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভূক্তভোগীরা বলেন, বাদল টাকার জন্য সব করতে পারে। সে এই এলাকার তিন ফসলী জমিগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে।

বর্তমানে আমাদের জমিতে আমন ধান, বিভিন্ন রকম শীতকালীন সবজি সহ অন্যান্য ফসল ছিল; সেগুলো সে মাটি ফেলে নষ্ট করে ফেলেছে।

আমরা স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহের ভাইয়ের কাছেও অভিযোগ দিয়েছি।

তিনিও কিছু করেন নি; বরং তিনি ওই বিএনপি নেতার অফিসে বসে আড্ডা দেন সকাল বিকাল।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য –

বিষয়গুলো নিয়ে কাশিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রমজান মিয়া বলেন, আমি রাতে ওই ভূক্তভোগীদের দেখতে ওই গ্রামে গিয়েছিলাম।

তাদের শান্তনা দিয়ে এসেছি। এসময় আমার সাথে বাদলের ভাই কাজী শহীদ ছিলেন।

এবিষয়ে বাসাইল উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম বলেন, আমাদের সাংসদ জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) এই প্রকল্প উদ্বোধন করেছেন।

যা কিছু হচ্ছে উনার জ্ঞাতসারেই হচ্ছে। অতএব সকল কিছুর দায় তাকেই নিতে হবে।

হিন্দুদের ওপর হামলার জন্য গভীর নিন্দা জ্ঞাপন করছি। আর দোষীদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি।

এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (আরএম শাখা) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারজানা আক্তার

তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর টাঙ্গাইল ঘটনাস্থলে একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করি।

গাড়ি দেখে সবাই পালিয়ে যায়, কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আর ঘটনাস্থলে কাউকে পাওয়া যায়নি বলে, জরিমানাও করতে পারিনি। তবে কিছু পাইপের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

ঘটনা সম্পর্কে টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ সিকদার মানিক মুঠোফোনে বলেন, জামাত-বিএনপির সাথে আত্মীয়তাই করবোই না, সেখানে তাদের সাথে উঠাবসা করার প্রশ্নই উঠে না।

তাহলে আপনি বাদল এন্টারপ্রাইজের সাথে যৌথভাবে ব্যবসা করেন কিভাবে জানতে চাইলে “জরুরী মিটিংয়ে আছি বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

এবিষয়ে বিএনপি নেতা ও বালু ব্যবসায়ী কাজী বাদল বলেন, এই সকল বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।

ঘটনার বিষয়ে বাসাইল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)  মোহাম্মদ মাজহারুল আমিন বিপিএম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি, কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন অভিযোগ পাই নি।

অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উল্লেখ্য, টাঙ্গাইল জেলা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নূর মোহাম্মদ সিকদার মানিক বিএনপি নেতা বাদলের ব্যবসায়ী অংশীদার বলে জানা যায়।

মানিক দীর্ঘদিন যাবত বিএনপি নেতার সাথে ওই এলাকায় বালু ব্যবসার সাথে যুক্ত রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেছেন টাঙ্গাইল ও বাসাইলের বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা।