নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের আটটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে নৌকার প্রার্থীদের পরাজিত করে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন।
এই তিনজন হলেন- টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর বহিষ্কৃত সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ, টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ওরফে রানা ও টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ছানোয়ার হোসেন।
প্রায় ১০ বছর আগে দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও কালিহাতীর তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও জনগণের ভালোবাসায় আচ্ছাদিত আছেন লতিফ সিদ্দিকী; সেই ভালোবাসায়ই তিনি বিজয়ী হয়েছেন।
আরো পড়ুন – সমর্থকদের মুক্তির দাবিতে লতিফ সিদ্দিকীর থানা ঘেরাও
২০১২ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত আমানুর রহমান খান (রানা) সংসদ সদস্য ছিলেন।
তাঁর বাবা আতাউর রহমান খান ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য।
টাঙ্গাইল সদর আসনে ছানোয়ার হোসেন ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সংসদ সদস্য।
দুই দফা সংসদ সদস্য থাকাকালে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, সদর উপজেলা পরিষদ, পৌর পরিষদ এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ওপর নিজস্ব একটি বলয় গড়ে তুলতে পেরেছেন ছানোয়ার হোসেন।
সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করে তিনি একটি নিজস্ব বলয় সৃষ্টি করেছেন।
সেই বলয়ের চাইতেও বেশি কাজ করেছে “মানুষের বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসার জায়গাটি”।
আর সেই জায়গার ওপর নির্ভর করেই নির্বাচন করেন তিনি বলে মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ ও বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধি।
সেই জায়গা থেকে জেলা, সদর উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগ, ওয়ার্ড ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মীও প্রকাশ্যে তাঁর পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেন।
সাধারণ মানুষের কথা –
স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, ছানোয়ার হোসেন সংসদ সদস্য হিসেবে নিজ এলাকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও সরকারি ভাতা সুবিধাদি দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
ফলে তাঁর প্রতি জনগণের আস্থা ও ভরসার জায়গা তৈরি হয়েছে। এ নির্বাচনে সেই আস্থা ও ভরসাকে কাজে লেগেছে তাঁর।
এখানে কোন পেশীশক্তি বা টাকার প্রভাব কাজ করেনি বলে মন্তব্য করেছেন তারা।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে দলীয় অফিস দুধ দিয়ে ধুয়ে পূণঃনির্বাচিত এমপির ছবি লাগালেন আ’লীগ নেতা
বাঘিল এলাকার বাসিন্দা চাঁন মিয়া বলেন, গত ১০টি বছর আমরা খুব সুখে-শান্তিতে ছিলাম। কোন মারামারি কাটাকাটি নাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের এলাকায় কোন রাস্তা ছিলো না, একটা সাইকেল যাইতে পারতো না। সেখান দিয়ে এখন ট্রাক চলে।
আর সাধারণ মানুষ যখন খুশি তাঁর সাথে সরাসরি কথা বলতে পারে। তাই মানুষের মধ্যে তার প্রতি একটা বিশ্বাস তৈরি হইছে।
জনপ্রতিনিধিদের কথা –
ঘারিন্দা ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. সুজন মিয়া বলেন, মানুষ তাঁরে ডাকলেই কাছে পায়।
আর তৃণমূল এমনভাবে খোলা থাকে যে, সাধারণ মানুষ সরাসরি তার কাছে গিয়ে কথা বলতে পারে। এই ভালোবাসাটাই বেশি কাজে লাগছে তাঁর।
ঘারিন্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. তোফায়েল আহাম্মেদ বলেন, আমাদের এমপি সাহেব একজন মাটির মানুষ।
তিনি সাধারণ মানুষের ভালোবাসা অর্জন করেছেন, মানুষ তাঁকে বিশ্বাস করে, তাঁর উপর মানুষের আস্থা আছে।
এসময় তিনি আরো বলেন, শুনলাম পরাজিত পক্ষ ছানোয়ার ভাইয়ের সম্পর্কে “পেশীশক্তি ও কালো টাকা ব্যবহার অভিযোগ করেছেন”।
আরো পড়ুন – বড় ভাই জিতলেও হেরেছে ছোট দুইজন
আমি তাদের বলবো, ছানোয়ার ভাইয়ের অবস্থান মানুষের মনিকোঠায়। মানুষ ছানোয়ার ভাইকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে, টাকার বিনিময়ে নয়।
আর গত ১০ বছরে কোথাও ছানোয়ার ভাই পেশিশক্তি ব্যবহার করছে একটা প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না।
অপরদিকে দাইন্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আফজাল হোসেন বলেন, ছানোয়ার হোসেন দানবীর আলহাজ্ব আবুল হাজীর ছেলে; তিনি পারিবারিক ভাবেই ধনী।
তাঁর বাবা ও তিনি মানুষের জন্য কাজ করেছেন, মানুষকে সেবা দিয়ে মন জয় করেছেন। আর সাধারণ মানুষ ভোট দিয়ে তারই প্রতিদান দিয়েছে।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহজাহান আনসারী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বরাদ্দকৃত প্রতিটি কাজ তিনি পূঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রতিটি এলাকায় বন্টন করে দিয়েছেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে প্রচুর উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন।
ফলে উন্নয়ন সাধারণ মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে গেছে।
১০ বছরের প্রতিটি দিন তারা এই এমপিকে খুব কাছ থেকে দেখেছে, যে কারণে তাদের মনের মধ্যে ছানোয়ার হোসেনের প্রতি বিশ্বাস, আস্থা ও ভরসা তৈরি হয়েছে।
আর এটাই ছানোয়ার হোসেনের বিজয়ের মূল ভিত্তি।