নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে একমাত্র কালিহাতী উপজেলা পরিষদে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একক নেতা প্রার্থী হয়েছেন।
তিনি হচ্ছেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা।
এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন রাজনীতিতে বহুল আলোচিত “সিদ্দিকী পরিবার” এর ছোট ছেলে আজাদ সিদ্দিকী।
আজাদ সিদ্দিকী কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম এবং সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীর ছোট ভাই।
তিনি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও সরকারি সা’দত কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি)।
আজাদ সিদ্দিকী বর্তমানে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সাথে যুক্ত।
দুই প্রার্থীর প্রকৃত অবস্থা ও অবস্থান –
স্থানীয়রা জানান, সিদ্দিকী পরিবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো কালিহাতী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে তাদের রাজনৈতিক অবস্থান আরো সংহত করতে চাইছে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ সিদ্দিকী পরিবারের আধিপত্য রোধ করতে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছে।
দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই কালিহাতীতে সিদ্দিকী পরিবারের একটি প্রভাব রয়েছে।
এই পরিবারের আলাউদ্দিন সিদ্দিকী (লতিফ সিদ্দিকীর দাদা) অবিভক্ত ভারতের কংগ্রেজের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন।
তিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন।
আলাউদ্দিন সিদ্দিকীর নাতি আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী কালিহাতী থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে পাঁচবার সংসদ সদস্য হয়েছেন।
তার স্ত্রী লায়লা সিদ্দিকী ১৯৮৬ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য হয়েছেন।
২০০৮ সালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকী মন্ত্রীত্ব লাভ করেন।
২০১৪ সালে হজ¦ ও তবলীগ জামাত নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করার তাকে দল থেকে বহিস্কার ও মন্ত্রীসভা থেকে অপসারণ করা হয়।
লতিফ সিদ্দিকী বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন।
তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
নির্বাচনে তার পাশে ছিলেন ছোট ভাই কাদের সিদ্দিকী ও আজাদ সিদ্দিকী।
এবার আজাদ সিদ্দিকী তার বড় দুই ভাইয়ের সমর্থন নিয়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন।
লতিফ সিদ্দিকী সরাসরি নির্বাচনের মাঠে না নামলেও নেপথ্যে থেকে ভাইয়ের জন্য কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন তাদের অনুসারীরা।
অপরদিকে, বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকীও ছোট ভাইয়ের পক্ষে নিয়মিত গণসংযোগ করে চলেছেন।
স্থানীয়রা আরো জানায়, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর যেসব কর্মীরা মাঠে কাজ করেছেন; তাদের নিয়েই আজাদ সিদ্দিকী উপজেলা নির্বাচনে কাজ করছেন।
অপরদিকে, বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকীর যেসব কর্মীরা মাঠে কাজ করেছেন; তাদের নিয়েই আজাদ সিদ্দিকী উপজেলা নির্বাচনে কাজ করলেও “লতিফ সিদ্দিকী আর আজাদ সিদ্দিকী এক না” বলে মন্তব্য করছেন অনেকেই।
ভোটের মাঠের সাবেক সাংসদের ভূমিকা –
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খানের (সোহেল হাজারী) গাঁ ছাড়া ভাব থাকলেও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সরাসরি আনোয়ার মোল্লার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
যদিও এই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন দলীয় নির্বাচন নয়।
সে ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অনেকটা রহস্যজনক বলে মনে করছেন অনেক নেতা-কর্মী।
এছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সহ দলের প্রতিটি শাখার নেতারা আনোয়ার মোল্লার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারনায় অংশ নিচ্ছেন বলেও জানা গেছে।
অনেকেই জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ার হোসেন মোল্লা (আনারস), পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আকরুজ্জামান আকতার (টিউবওয়েল) ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফাতেমা আক্তার বৃষ্টি (ফুটবল) তিনজন মিলে একটি প্যানেল তৈরি করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা জানান, আখতার ও বৃষ্টি সাবেক এমপি’র প্রার্থী।
তাদের সাথে আনোয়ার মোল্লার প্যানেল তৈরির শর্তে সাবেক এমপি তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে হাসান ইমান খান (সোহেল হাজারী) কোন জবাব না দিয়ে মুঠোফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
সভাপতির ভূমিকা –
দলের একটা নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, কালিহাতী উপেজলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম তালুকদারকে নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা দেখা যায় নি।
সাবেক সংসদ সদস্য হাসান ইমাম খান (সোহেল হাজারী)’র সাথে দ্বন্দ্বের কারণে তিনি এই নির্বাচনী প্রচারণায় খুব একটা অংশ নিচ্ছেন না।
নিজ ইউনিয়নের বিভিন্ন সভায় তাকে দেখা গেছে বলে জানিয়েছ সূত্রটি।
এই বিষয়ে সভাপতি মোজহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এই অভিযোগগুলো মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এই গুলো দল ও দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র।
আনোয়ার মোল্লা আমাদের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, তাকে বিজয়ী করানোই আমার একমাত্র লক্ষ্য।
ভোটের মাঠ ঘুরে দেখা –
এলেঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার ব্যবসায়ী, দিন মজুর সহ অনেকেই বলেন, নির্বাচন জমে উঠছে। তাদের ভাষ্যমতে, এই নির্বাচন মূলত আওয়ামী লীগ ও সিদ্দিকী পরিবারের মধ্যে। দুইজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
উপজেলার পটল বাজার ঘুরে কথা হয় কয়েকজন ভোটারের সাথে।
বেশ কয়েকটি চায়ের স্টলে চা পান করার সময় ভোটাররা জানান, এই চর এলাকায় মূলত আনারস ও মোটরসাইকেলের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
দুই প্রার্থীর বক্তব্য –
আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, নির্বাচনে আমি আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে এক প্লাটফর্মে আনতে পেরেছি। জনগণের কাছ থেকে ভালো সারা পাচ্ছি।
আজাদ সিদ্দিকীকে ইঙ্গিত করে বলেন, তিনি নির্বাচনের আগে টাঙ্গাইল থেকে এসে কালিহাতীর ভোটার হয়েছেন।
আমি কালিহাতীর মানুষের মাঝেই আছি। তাই জনগণ আমাকেই ভোট দিবে বলে বিশ্বাস করি।
আজাদ সিদ্দিকী বলেন, কালিহাতীর প্রতিটি অঞ্চলের ভোটারদের কাছে থেকে আমি ভালো সারা পাচ্ছি; তারা আমাকে সমর্থন ও দোয়া-আশির্বাদ করছেন।
তারা ভোট দিয়ে আমাকে বিজয়ী করবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। সম্পাদনা – অলক কুমার