টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে জালিয়াতি ও প্রতারনার মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করে ভাতাসহ সরকারি সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করার অভিযোগ উঠেছে বিতর্কিত এক মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে। সনদ বাতিলসহ সকল সুযোগ সুবিধা বন্ধের জন্য বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধার বড় সহোদর দুইভাই মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।
বিতর্কিত এই মুক্তিযোদ্ধার নাম মো. আলমগীর হোসেন হিরু। সে মির্জাপুর উপজেলা সদরের বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের মৃত হাকিম উদ্দিনের ছেলে।
জানা যায়, ওই গ্রামের মৃত হাকিম উদ্দিনের চার ছেলের মধ্যে আলমগীর হোসেন হিরু সবার ছোট। হিরুর বয়স যখন ৭ তখন তাদের বাবা মারা যান। পরে বড় তিন ভাই তাকে লালন পালন করেন। বড় ভাই তমছের আলী গত ছয় বছর আগে মৃত্যু বরণ করেন। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় হিরুর বয়স ১০/১২ বছর ছিল।
বড় দুই ভাই বাছেদ মন্সী ও বাবুল মিয়া ওরফে বাবু মিয়ার দাবি তাদের ছাট ভাই আলমগীর হোসেন হিরু প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোন ভাবেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি। অথচ মিথ্যা তথ্য দিয়ে কৌশলে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে সরকারি সম্মানি ভাতা নিচ্ছেন। এছাড়াও মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় তার এক ছেলে পুলিশে ও মেয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরি হয়েছে। এছাড়া অপর ছেলেও একইভাবে পুলিশে চাকুরি দেয়ার চেষ্টা করছেন।
এসব বিষয় উল্লেখ করে বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন হিরুর সহোদর দুই ভাই আব্দুল বাছেদ মুন্সী (৭৮) ও বাবলু মিয়া ওরফে বাবু মিয়া (৭৫) গত ১৪ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারা বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে শ্রেষ্ঠ সন্তানদের বিতর্কিত করবে তা নিজেদের বিবেক মেনে নিতে পারেনি বলে মন্ত্রী বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। তারা দাবি করে বলেন, বিতর্কিত মু্িক্তযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে প্রতিটি বাড়ি থেকেই এভাবে প্রতিবাদ করা উচিত। অভিযোগে তদন্ত সাপেক্ষে তারা আলমগীর হোসেন হিরুর মুক্তিযোদ্ধা সনদ/ গেজেট স্থগিত করে সম্মানি ভাতাসহ সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন।
বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন হিরু মির্জাপুর মুক্তিযোদ্ধা পৌর কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন বলে দাবি করেন। এছাড়া তিনি যে যুদ্ধে গিয়েছিলেন তা তার বড় ভাইয়েরা জানেন না বলে জানান। কমান্ডার মোহাম্মদ আলী বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা আলমগীর হোসেন হিরুকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে একই গ্রামের বাসিন্দা ও মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার অধ্যাপক দুর্লভ বিশ্বাস বলেন, আলমগীর হোসেন হিরু যে একজন মুক্তিযোদ্ধা ২০১০ সালের জুনে মির্জাপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল নির্বাচনের ভোটার তালিকা দেখে আমি তা প্রথম জানতে পারি।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল মালেক বলেন, যেহেতু পরিবার থেকে মন্ত্রী বরাবর অভিযোগ হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।