পরকীয়া একটি বিষাক্ত মায়াজাল। এই জালে আঁকড়ে আছে বহু জাতের মানুষ। যা একটি সুন্দর সংসারকে নিমিষেই ধবংস করে দিতে পারে, আবার একটি পরিবারকে নিমিষেই অতিষ্ঠ করে তুলতে পারে। এই সম্পর্কে জড়িয়ে এরই মধ্যে স্বামী খুন করেছে নিজের বিবাহিত স্ত্রীকে। বউ ছেড়ে গিয়েছে নিজের স্বামীকে আর ছেলে তাড়িয়ে দিয়েছে বাবা-মাকে। এমনকি মা খুন করেছে তার সন্তানকে। মোট কথা একটি সুন্দর হাসিখুশি সুখের সংসার নিমিষেই গুঁড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে এই পরকীয়ার সম্পর্ক।
তবে কেউ নিজের ইচ্ছায় এই বিষাক্ত সম্পর্কের পথে পা বাড়ান আবার কেউ মনের অজান্তেই জড়িয়ে পড়েন এই মায়াজালে। হয়ত সম্পর্কে জড়ানোর আগে তিনি বুঝতেই পারেননি এর ঘনত্ব কত গভীর হতে পারে। তবে অনেকেই নিজেদের পছন্দের স্বামী/স্ত্রী না পেলে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, আবার অনেকেই স্বভাবগুণে এই সম্পর্কে নিজেকে জড়ান।
যাইহোক আসল কথায় আসি, আজ খবরবাংলা২৪ ডট কমের পাঠকদের জন্য থাকছে পরকীয়া নিয়ে এমনই এক নির্দয় গল্প যা ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। নিজের পুত্রবধূর সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন ৫২ বছর বয়সী আবু জাফর স্বপন নামের এক ব্যক্তি। এর পরের ঘটনা আরো ভয়াবহ। যা প্রকাশ করলে হয়ত আপনিও বিচলিত হয়ে উঠবেন। কীভাবে হতে পারেন একজন বাবা এমন? নিজের ছেলে হাবিবুল্লাহকে (২৫) খুন করিয়েছেন বাবা! এই অভিযোগে এরই মধ্যে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারও করেছে।
ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের মুলবাড়ি গ্রামে। উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের মুলবাড়ি গ্রামের আবু জাফর স্বপন। তার ছেলে হাবিবুল্লাহ (২৫) পেশায় একজন শিক্ষিত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। সে ৮ মাস আগে কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া গ্রামের মকবুল হোসেনের মেয়ে ছবুরাকে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছু দিন পর থেকেই শ্বশুর আবু জাফরের সাথে পুত্রবধূ ছবুরার অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠে। পিতা আবু জাফর নানা কৌশলে নব বিবাহিত ছেলে হাবিবুল্লাকে রাতে বাড়ির পাশের বাজারে দোকানে রাত্রিযাপনের জন্য পাঠিয়ে দিত। বিষয়টি হাবিবুল্লাহর সন্দেহ হয়।
এ অবস্থায় একদিন পিতার সাথে স্ত্রীর মেলামেশার দৃশ্য দেখে ফেলেন। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সাথে তার মনমালিন্য হয়। এরপরও শ্বশুর ও পুত্রবধূর অনৈতিক সম্পর্ক চলতেই থাকে। এনিয়ে নিরব দুঃখ কষ্ট নিয়ে জীবন কাটায় হাবিবুল্লাহ।
পুত্রবধূর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক ধরে রাখতে পিতা আবু জাফর নিজ পুত্র হাবিবুল্লাহকেই দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সে মোতাবেক গত ২৬ ডিসেম্বর রাতে ভাড়াটে খুনিদের কাছে হাবিবুল্লাহকে তুলে দেয়। কিন্তু তাদের পরিচয় বলতে পারেনি ছবুরা। সে রাত থেকেই নিখোঁজ হয় হাবিবুল্লাহ। নিখোঁজের চারদিন পর গত ৩০ ডিসেম্বর বিকেলে উপজেলার সংগ্রামপুর ইউনিয়নের বগা গ্রামের আব্দুল লতিফের বাড়ির পাশে বাশঝাঁড়ে শরীরে জখম ও এক চোখ উপড়ে ফেলা অবস্থায় হাবিবুল্লাহর লাশ পাওয়া যায়। পরে নিহতের বাবা আবু জাফর অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে ঘাটাইল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
টাঙ্গাইলের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ৫ জানুয়ারি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন নিহতের স্ত্রী ছবুরা বেগম। জবানবন্দিতে সে শ্বশুরের সাথে তার অনৈতিক সম্পর্ক থাকা এবং এ সম্পর্কে বাধা দেয়ায় স্বামী খুন হওয়ার কথা স্বীকার করেন। পরে পুলিশ গত ৬ জানুয়ারি হাবিবুল্লাহর পিতা আবু জাফর স্বপন (৫২)কে গ্রেপ্তার করেন।
ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাকসুদুল আলম জানান, শ্বশুর ও পুত্রবধূর অনৈতিক সম্পর্কের সূত্র ধরেই হাবিবুল্লাহ খুনের ঘটনা ঘটেছে। হাবিবুল্লাহর স্ত্রী ছবুরা এ ব্যাপারে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শ্বশুর আবু জাফরকে আটক করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হত্যার সাথে জড়িত অন্যান্যদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে।