করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে টাঙ্গাইলের গোপালপুর ও ঘাটাইল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত ১০টি গ্রাম ও ঘাটাইল পৌর এলাকার বিভিন্ন সড়ক ও মহল্লার রাস্তায় রাস্তায় গাছের গুড়ি ফেলে ও বাঁশ বেধে লকডাউন করে দিয়েছে এলাকার জনসাধারণ ও গ্রামের যুবকরা।
সোমবার (৬ এপ্রিল) ঘাটাইল ও গোপালপুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামের প্রবেশ পথে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গোপালপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গোপালপুরে স্বেচ্ছায় লকডাউন করে দিয়েছে ৫টি গ্রাম। নিজ থেকে লকডাউন ঘোষণার পাশাপাশি রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে ও গুঁড়ি ফেলে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে চলাচলের রাস্তা।
উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের মোহনপুর, কামাখ্যা বাড়ি, মাঝপাড়া, ধুলটিয়া ও নবধুলটিয়া গ্রামের মানুষজন গ্রামের প্রবেশ পথে বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়েছেন। সেখানে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে নোটিশ। সেখানে লেখা রয়েছে ‘প্রশাসন ও জনপনিধি ছাড়া বহিরাগতদের গ্রামে প্রবেশ নিষেধ।’
ধুলটিয়া গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘গ্রামবাসীর নিরাপত্তার জন্য এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তারা বলেন, এছাড়া আশেপাশের এলাকা থেকে কিছু যুবক আড্ডা দেয়ার জন্য প্রতিদিন এখানে আসে। তাদের মাধ্যমেও করোনা ছড়াতে পারে, তাই গ্রামে করোনা ঝুঁকি এড়াতে সচেতন গ্রামবাসী মিলে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।’
অপরদিকে, ঘাটাইলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ও পৌরসভা এলাকার বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও সড়ক লকডাউন করে এলাকার বাসিন্দারা স্বেচ্ছায় অবরুদ্ধ জীবনযাপন করছেন। উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধূর গলগন্ডা গ্রামে গিয়ে দেখা যায় প্রতিটি প্রবেশ মুখে ঘাটাইল- ভূয়াপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে গিয়েছে গ্রামবাসী। সেখানে পাহাড়ায় রয়েছে কয়েকজন যুবক।
কায়সার কবীর মিলন জানান, সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করতে এবং গ্রামকে সুরক্ষিত রাখতে বহিরাগতদের প্রবেশ ঠেকাতে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। গ্রামে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না এবং গ্রামবাসী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাইরে যাচ্ছেন না।
একই ইউনিয়নের গুনগ্রামে গিয়ে দেখা যায় কর্না গ্রামের প্রবেশ মুখ বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে গ্রামের যুবকরা । যুবকরা জানান, যানবাহন চলাচল ও গ্রামের মানুষের চলাচল সীমিত করতেই তাদের এই উদ্যোগ। তবে প্রশাসনের সকল যানবাহন ও ত্রানসামগ্রী বিতরণের জন্য চলাচলকারী যানবাহন লকডাউনের আওতামুক্ত থাকবে।
পৌরসভা এলাকার কাজীরোড, পৌরসভা রোড, পশ্চিমপাড়াসহ বিভিন্ন সড়ক বাশ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। যাতে কোন প্রকার সিএনজি, অটোরিক্সা, রিক্সা চলাচল না করতে পারে। এসব যান চলাচলের কারনে বিভিন্ন মোড়ে আড্ডা ও জনসমাগম ঠোকাতে এ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে স্থানীয় জনগন।
উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জন প্রতিনিধিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক গ্রামের বাসিন্দারা নিজ উদ্যোগে নিজ নিজ গ্রাম লকডাউন করা শুরু করেছেন।
উপজেলার সাগরদিঘী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার বলেন, জনসমাগম ও বাজারে লোকসমাগম ঠোকতে গারোবাজার-সখিপুর সড়ক ও ঘাটাইল-ভরাডোবা সড়ক ছাড়া সব গ্রামীন সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যাতে হাট-বাজার ও মোড়ে মোড়ে জনসমাগম না হয়।
জামুরিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামীম খান বলেন, নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন গ্রাম লকডাউন করার খবর পাচ্ছি। নিজে সচেতন না হলে করোনা প্রতিরোধ করা সম্ভব না। গ্রামবাসীর মধ্যে সচেতনতাবোধ তৈরি হওয়ায় জন্য তিনি তাদেও ধন্যবাদ জানান। তবে প্রশাসনিক কাজে যাতে বাধার সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, জনগন সচেতন হলে এ দূর্যোগ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। তবে লকডাউনের কারনে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, সরকারি খাদ্য সহায়তা জরুরি রোগী পরিবহন তথা রাষ্টীয় কাজের বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।
অন্যদিকে ঘাটাইল উপজেলার জামুরিয়া ইউনিয়নের সাধূর গলগন্ডা গ্রামের প্রবেশ মুখে ঘাটাইল-ভূঞাপুর সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে এবং টায়ারে আগুন ধরিয়ে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করে গিয়েছে গ্রামবাসী। গ্রামে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না এবং গ্রামবাসী জরুরি প্রয়োজন ছাড়া গ্রামের বাইরে বের হচ্ছেন না বলে গ্রামের অনেকেই জানান। এছাড়া গুনগ্রামের প্রবেশ মুখ বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে আটকে দিয়েছে গ্রামের যুবকরা।