অনলাইন ডেস্ক:
আপনি যদি নতুন করে ব্যবসায় নামতে চান, কিংবা ঢিমেতালে চলতে থাকা পুরাতন ব্যবসাকে নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চান তবে কতিপয় দিকে আপনাকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
সঠিক মাত্রার আত্মবিশ্বাস
আত্মবিশ্বাসী মানুষ সফল হয়, এ কথা আমরা সবাই জানি, কিন্তু অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস মানুষকে বিভ্রান্ত করে ফেলে, আত্মবিশ্বাস তখন অহংকারের পর্য়ায়ে চলে যায়।
আবার দুর্বল আত্মবিশ্বাসী মানুষকে কেউ পছন্দ করে না, ভরসা করে না। বাস্তবতার অভিজ্ঞতায় দেখবেন সংসারে বাবা বা বড় ভাই শ্রেণির মানুষের কথা অনেকসময় ভুল হলেও আমরা হাসিমুখে মেনে নেই!
বিপদে আপদে তাদেরই ভরসা করি। কারণ তারা ভুল কথাটাও আত্মবিশ্বাস থেকে বলেন। অনেক পরিবারে মায়েরাও আত্মবিশ্বাসী হয়ে পরিবার মেইনটেইন করেন।
ব্যবসা যেহেতু অনেকটা নির্ভর করে পারসোনাল ব্রান্ডিং এর উপর, আপনাকে ভরসা করলে আপনার পন্যও কিনতে পারবে ক্রেতা নির্ভাবনায়।
আত্মবিশ্বাসই প্রথম ধাপ যেটা আপনাকে ব্যবসার ক্ষেত্রে পজেটিভ ভাইভ দিবে। একটা গল্প বলি।
আমার এক ছাত্র গেছে করপোরেট অফিসে ভাইভা দিতে। তো, প্রয়োজনীয় একাডেমিক বিষয় জিজ্ঞাসা করার পর একজন নিয়োগকর্তা হুট করেই জিজ্ঞাসা করে বসলেনঃ
আচ্ছা বলেন তো, এই জগৎটা কার বশ?
ছাত্রটি প্রথমে মনে মনে বিভ্রান্ত হল, ভাবলো কার কথা বলি… কার কথা বলি… মহা মুশকিল তো! পরে উত্তর খুঁজে না পেয়ে সময়ক্ষেপণের জন্য যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রশ্নকারীর প্রশ্নটাই রিপিট করলো:
জগৎ টা কার বশ!সঙ্গে সঙ্গে তুমুল হাততালি সবার! পারফেক্ট বলেছেন। আপনাকেই আমাদের করপোরেট অফিসে চাই! আসলেই এ পৃথিবীটা টাকার কাছে বশ! ছাত্র এবার মেলালো…
ও তাইতো! প্রশ্নটাই উত্তর!
জগৎ টা কার বশ?
জগৎ টাকার বশ!
নেতিবাচকতাকে ইতিবাচকতায় পরিণত করা:
চলার পথে এমন হরহামেশাই ঘটে, যে আমরা না চাইতেও ভুল করে ফেলি! ভুল মানুষকে বিশ্বাস করি, ভুল জিনিস নির্বাচন করে ফেলি। এরপরে আবার নিজেরাই হতাশায় ভুগে সেই সামান্য করে ফেলা ভুলটুকুকে বাড়িয়ে দীর্ঘ করে ফেলি। থামুন!
আপনি মানুষ, যন্ত্র নয়! আপনার আবেগ আছে, মন আছে! ভুল করেছেন বলেই আপনি মানুষ! ভুল করেছেন ভাল কথা। এবার সেই ভুলটাকে কীভাবে সঠিক করা যায় সেটি নিয়ে আপনাকে মাথা খাটাতে হবে, এবং দ্রুত সেই ভুলকে কর্ম দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে সাফল্যে পরিবর্তন করতে হবে।
এক্ষেত্রেও একটি উদাহরণ দেই। এক সাংবাদিক গেছে গ্রামের এক স্কুলে জেএসসিতে এ প্লাস পাওয়া ছাত্ররা আসলেই মেধাবী কি না, সেটি যাচাই করতে। তার আসল উদ্দেশ্য ছিল এ প্লাস পাওয়া ছাত্রদের হেও করা, ছোট করা।
সে কারণে সে ইচ্ছে করেই এমন প্রশ্ন করছে যেন ছাত্ররা ভুল উত্তর করে এবং সে এটা মজা করে তা প্রচার করতে পারে। এরকম করে করে এক ছাত্রকে সে প্রশ্ন করল আচ্ছা বলতো দেশের বর্তমান জনসংখ্যা কত?
ছেলেটি জানতো উত্তর ১৬ কোটি। কিন্তু মুখ ফস্কে বেড়িয়ে গেলো.. ৩২ কোটি! সাংবাদিকতো হেসেই খুন! সে যা চাচ্ছিল তাই হয়েছে। ছাত্রটি ভুল করেছে!
ছাত্রটি বুঝল টিভিতে লাইভ সম্প্রচারে এমন ভুল সত্যি তার স্কুলকে বিপদে ফেলতে পারে! যেটা স্কুলের জন্য, তার নিজের জন্য ভয়ানক নেতিবাচক প্রভাব এনে দেবে! তখন সে দ্রুত বুদ্ধি করে ডেকে বললোঃ
ভাই! দাঁড়ান! আগে শুনবেন না ৩২ কোটি কেন বললাম?
: তুমি জান না তাই বলেছো! সোজা হিসেব!
: হা হা! আসলে ভাই আপনিই সমকালীন তথ্য রাখেন না! আগে হয়তো ছিল ১৬ কোটি। কিন্তু এ বছর থেকে দেখেন সরকার দলীয় নেতারা বলে যাচ্ছেন, “আমাদের সাথে দেশের ১৬ কোটি জনগণ আছে!”
আবার বিরোধী দলও বলে যাচ্ছে “আমাদের সাথে দেশের ১৬ কোটি জনগণ আছে!” এখন এই খ্যাতিমানরা নিশ্চয়ই মিথ্যুক নন! এরাই দেশবরেণ্য নেতা, এরাই মন্ত্রী! এদের উভয়ের কথা সত্যি হলে দেশের জনগণ অবশ্যই ৩২ কোটি!
সাংবাদিকের তো আক্কেলগুড়ুম! বাপরে কত মেধাবী এই স্কুলের বাচ্চারা! সহজেই নেতিবাচকতা বদলে ইতিবাচকতায় পরিনত হলো!
সঠিক পণ্য নির্বাচন, সঠিক ইনভেস্টমেন্ট:
আপনি একটি ব্যবসায় নামার আগে আপনাকে প্রথম যে দুটি বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে, সেটি হল আপনার পণ্যের উৎস সহজ এবং আপনার হাতের কাছে এভেইলেবেল কি না সেটা দেখা, এবং সে পন্যের বাজারে চাহিদা কেমন।
সহজ কথায় বললে বাজার রেকি করা। পন্যের উৎসের ক্ষেত্রে যদি আপনি অরিজিনাল উৎস থেকে সরাসরি ক্রয় করতে পারেন তবে কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন। আপনার কষ্টও কম হবে এক্ষেত্রে।
যেমন বাগেরহাটের কথাই বলি। বাগেরহাটের ইউনিক জিনিস, পান সুপরি, চিংড়ি, নারকেল তেল। এবার উদ্যোক্তা যদি এ এলাকার হয় তবে তার উচিৎ হবে পন্য নির্বাচনে এগুলোকে বেশি প্রায়োরিটি দেয়া।
এখানে সে সহজেই অরিজিনাল উৎস থেকে কমে জিনিশ কিনে বাজারে কমে দিতে পারবে। যেটা ঢাকা বা অন্যজেলার একজন উদ্যোক্তা পারবে না।
কেননা চিংডি বা তেল কিনতে তাকে বাগেরহাটে নিজে আসতে হবে যেটাতে পরিশ্রম অধিক হবে, আর ব্রোকার বা মধ্যস্বত্তভোগীর মাধ্যমে কিনলে দাম বেশি পরবে, ফলে তুলনামূলক কমে বাজারে ছাড়তে পারবে না!। তার ব্যবসায় প্রসার ঘটানো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে।
তাই পণ্য চুজের ব্যাপারে এদিকে প্রথম নজর দিতে হবে।
এবার যে পণ্য আপনি কিনবেন বা উৎপাদন করবেন, সেটার মারকেট ভ্যালু আছে কি না যাচাই করা। একটা সত্য ঘটনার উদাহরণ দেব এক্ষেত্রঃ
কিশোরগঞ্জের এক প্রান্তিক চাষী একবার ধান বাদ দিয়ে পাট উৎপাদন করেছিল প্রচুর! সে অনুমান করেছিল বাজারে যেহেতু পাটের খুব চাহিদা, আদমজী জুটমিলের লোক এসে সহজেই তার পাট উচ্চমূল্যে কিনে নেবে।
সে স্বপ্ন দেখতে লাগলো পাট বিক্রি করে লাখপতি হবার। অত:পর কঠোর পরিশ্রমে পাট চাষ করে পুরো প্রক্রিয়া শেষে সে যখন বাজারে পাট তুলল, কেউ তার পাট কিনতে এল না!
পর পর সাতদিন বাজারে তোলার পরও যখন তার পাট বিক্রি হলো না, তখন সে ভাবলো ঘটনা কী! মিলের লোক কেন আসে না!
এবার সে মিলের অবস্থা যাচাই করতে দু টাকা দিয়ে ট্রেনের টিকেট কেটে নারায়ণগঞ্জ এলো আদমজী জুটমিলে। এসে দেখলো জুট মিল সে বছরের শুরুতেই বন্ধ হয়ে গেছে! পাট কেনাতো দূরের কথা এখানকার শ্রমিকরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে দেদারছে নেশাগ্রস্ত হয়ে পরছে!
লোকটি এবার তুমল লসে পরে আর দেনার কথা ভেবে উৎপাদিত পাটে আগুন দিয়ে নিজেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ল! সে সময়ের বড় বড় পত্রিকায় সে নিউজ ছাপা হয়েছিলো।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভিসি অধ্যাপক মীজান স্যার এক পলিসি মেকিং সংক্রান্ত সভায় এই ঘটনা তুলে ধরে প্রশ্ন তুলেছিলেন এই চাষীর মৃত্যুর জন্য আসলে কে দায়ী ?
দায়ী মূলত চাষী নিজে! কেননা সে পাট চাষের সিদ্ধান্ত নেবার আগে আদমজী জুট মিলে খোঁজ নেয় নি, পাট বিক্রি হবে কি না! তার দু হাজার টাকা পাটে ইনভেস্ট করার আগে দু টাকা দিয়ে রেলে চেপে নারায়ণগঞ্জ আসা উচিৎ ছিল, পাট চলবে কি না যাচাই করার জন্য!
সে যদি আগে এখানে আসতো তবে নিশ্চিতভাবে বুঝে যেত এখানে এখন পাটের প্রয়োজন নেই! হতাশায় ভোগা শ্রমিকদের প্রয়োজন সস্তা নেশাদ্রব্য! ফলে সে ফিরে গিয়ে বরং তামাক বা গাজা পাতা চাষে ইনভেস্ট করতো! এবং সেটি বিক্রয় করে অধিক মুনাফা পেতে পারতো।
আর ইনভেস্টমেন্টের সঠিক পরিমাণ কী হওয়া উচিৎ এ সংক্রান্ত একটি মজার গল্প বলে লেখা শেষ করবো। শিক্ষক ক্লাসে বিটলুকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ
বিটলু বলতো আমাদের দেশের সরকার মেয়েদের শিক্ষায় বেশি ইনভেস্ট করে ছেলেদের জন্য করে না কেন?
বিটলুর বিটকেলে উত্তরঃ স্যার সরকার ভাল করেই জানে, মেয়েরা স্কুলে আসলে ছেলেগুলি এমনিতেই আসবে! অযথা পয়সা খরচ করে লাভ কী!
শিক্ষকঃ তবেরে! ছেচড়া বাদর ছেলে!
হা হা। আপনিই ভাল বুঝবেন আপনি কত টাকা কোন খাতে মার্কেটে ঢাললে সঠিক সময়ে জাল ফেলে তুলে নিতে পারবেন! বিচক্ষণতা এক্ষেত্রে বেশি প্রয়োজন।
পরিশেষে, স্বপ্ন দেখুন। সঠিক পদক্ষেপে সে স্বপ্নের বীজকে ফুলে ফলে সুশোভিত বৃক্ষে পরিণত করুন। শুভকামনা সবার জন্য।
লেখক: সহকরী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
সোনালী সংবাদ/এইচ.এ