ডেস্ক নিউজ : নির্বাচন কমিশন এখন অল্প সময়ের মধ্যে শিশুদের জাতাীয় পরিচয়পত্র দেয়ার কাজ শুরু করতে চাইছে।
বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশন চোদ্দ থেকে আঠারো বছর বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তবে এই বয়সের অর্ধকোটির বেশি শিশু কিশোরের তথ্য কিভাবে সংগ্রহ করা হবে-সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন এখনও কোন পদ্ধতি ঠিক করতে পারেনি।
একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহাদাত হোসেন বলেছেন, সোমবার নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে পদ্ধতি নিয়ে দ্রুত সুপারিশ তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের অনেকে শিশু কিশোরদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টিকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন।
তারা বলেছেন, স্কুল ব্যবস্থার বাইরে যে শিশুরা রয়েছে, তাদের বয়সের সঠিক তথ্য পাওয়াটা অসম্ভব হতে পারে। যাচাই করা না হলে অপপ্রয়োগের সুযোগ থাকতে পারে।
শিশুদের জাতীয় পরিচয়পত্র কি কাজে লাগবে?
আঠারো বছরের কম বয়সীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়ার চিন্তার কথা নির্বাচন কমিশন বলে আসছে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে।
এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে এক বৈঠকে এনিয়ে আলোচনা করে পরিকল্পনাটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করা হয়েছে।
কিন্তু এই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শিশুরা কী করবে বা তাদের এটি কোন কাজে প্রয়োজন হতে পারে- এর উদ্দেশ্য নিয়ে এসব নানা প্রশ্ন তুলেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।
নির্বাচন কমিশনও প্রয়োজনীয়তার ক্ষেত্রগুলো এখনও সুনির্দিষ্ট করতে পারেনি।
একজন নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহাদাত হোসেন বলেছেন, তার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি শিশু কিশোরদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে সে বিষয়ে কমিশনের কাছে সুপারিশ করবে।
তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে যেন এই পরিচয়পত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, প্রাথমিকভাবে এই উদ্দেশ্য নিয়ে তারা কাজ করছেন।
কোন বয়সীদের তথ্য নেয়া হবে?
নির্বাচন কমিশনার মি. হোসেন জানিয়েছেন, তারা ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের তথ্য সংগ্রহ করবেন।
“আঠারো বছরের নিচে এই সময়টাতে তাদের অন্তবর্তীকালীন জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে।
“তাদের সব তথ্য এমনভাবে নেয়া হবে; যাতে সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বয়স আঠারো বছর হলে অটোমেটিক্যালি (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) তারা ভোটার হয়ে যায়,” বলেন মি: হোসেন।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার সময় ১৭ বছর বয়সীদেরও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে তাদের পরিচয়পত্র দেয়া সম্ভব হবে।
সেজন্য এখন এর নিচে যাদের বয়স তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
শিশু কিশোরদের বয়সের সঠিক তথ্য সংগ্রহই বড় চ্যালেঞ্জ।
সতেরোর কম বয়সী কিশোরদের বয়সের সঠিখ তথ্য সংগ্রহই সমস্যার মূল জায়গা বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী একটি বেসরকারি সংস্থা ফেমার প্রধান মুনিরা খান বলেছেন, বয়স সঠিকভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব না হলে এই পরিচয়পত্রের অপপ্রয়োগও হতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির মুখে ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশের নাগরিকদের প্রথমে ভোটার আইডি কার্ড দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।
পরে সেটাকে জাতীয় পরিচয়পত্রে পরিণত করা হয়।
এই জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির কাজের শুরুতে নির্বাচন কমিশনের সাথে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী বেসরকারি সংস্থাগুলোও সহায়তা করেছে।
সেই সময়ের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মুনিরা খান বলেছেন, “তখন দেখেছি বড়রাই তাদের সঠিক বয়স বলতে পারে না; এখন তারা তাদের ছেলে মেয়েদের বয়স কীভাবে বলতে পারবে?”
তিনি জন্ম নিবন্ধন নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করেছেন।
“বেশিরভাগ মানুষই জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নেয় না। আর জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট নেয়ার ক্ষেত্রেও নানা অনিয়ম বা ঝামেলা পোহাতে হয়; সেজন্যও তাতে মানুষের আগ্রহ কম,” বলছেন মুনিরা খান।
শিশু কিশোরদের পরিচয়পত্র দেয়ার ক্ষেত্রে সঠিক বয়স পাওয়া না গেলে রাজনৈতিক দলগুলো এর অপপ্রয়োগের সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করেন মুনিরা খান।
“রাজনৈতিক দল বা পাড়া মহল্লার প্রভাবশালীরা যদি মনে করে যে, একটি শিশুর বয়স সাড়ে সতেরো বছর দিয়ে দিলাম; যাতে অল্প সময়ে আঠারো বছর হলেই সে কাগজে কলমে ভোটার হবে এবং আমাদের হয়ে ভোট দিতে পারবে।”
তিনি বলছেন, এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
পদ্ধতি নিয়ে সুপারিশ তৈরির উদ্যোগ –
নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাহাদাত হোসেন বলছেন স্কুলের শিক্ষার্থীদের তথ্য তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতির ব্যাপারে তার নেতৃত্বাধীন যে কমিটি সুপারিশ তৈরির কাজ করছে তারা তথ্য সংগ্রহের কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করছে।
নির্বাচন কমিশনার মি: হোসেন বলেছেন, স্কুল বা শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে যে শিশুরা রয়েছে; তাদের তথ্য সংগ্রহ করা যেতে পারে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে।
তিনি জানিয়েছেন, এখন তাদের কমিটি আগামী বুধবার জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পর্কিত বিভাগের সাথে বৈঠক করে সুপারিশ তৈরি করবে এবং সেই সুপারিশের ভিত্তিতে পদ্ধতি চূড়ান্ত করবে কমিশন।
সূত্র – বিবিসি বাংলা, সম্পাদনা – অলক কুমার