রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত ব্যক্তিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের শপথ পাঠ করানোর বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত করা এমন বিধান কেন ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানের পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এবং এই বিধান স্বেচ্ছাচারী, অসাংবিধানিক এবং সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর পরিপন্থী হওয়ায় কেন তা বাতিল করা হবে না—জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আইন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এক রিটে প্রাথমিক শুনানির পর বিচারপতি এ কে এম আসাদুজ্জামান ও বিচারপতি সৈয়দ এনায়েত হোসেনের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল দেন। সোমবার (১০ মার্চ) গীতিকবি, লেখক শহীদুল্লাহ ফরায়জী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন করেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ওমর ফারুক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জসীম সরকার ও মো. রাসেল আহমেদ। আইনজীবী ওমর ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘৮ সপ্তাহের মধ্যে বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলেছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতির শপথ পাঠ করানোর বিধান ফিরিয়ে আনতে বিবাদীরা যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন, সেই নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিল রিটে। হাইকোর্ট এই নির্দেশনা দেননি বলে জানিয়েছেন আইনজীবী ওমর ফারুক। রিটে বলা হয়েছে, ধূর্ত, দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদরা সেচ্ছাচারীভাবে সংবিধান পরিবর্তন করে চিরকাল ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণ নতুন একটি বাংলাদেশর স্বপ্ন দেখেছে, যে বাংলাদেশের প্রকৃত মালিক হবে জনগণ।
দেশের বিচার বিভাগ,
নির্বাহী বিভাগ এবং আইন বিভাগ জনগণের সেবায় নিয়োজিত হবে। রাষ্ট্রের মালিক হিসাবে নাগরিকের অধিকার সমুন্নত রাখতে রাষ্ট্র প্রধানের শপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে রিটে আরো বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির শপথ তার অধীনস্থ বা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির (স্পিকার) কাছ থেকে উচিত নয়। কারণ স্পিকারের কার্যাবলী রাষ্ট্রপতি নিজেই পর্যবেক্ষণ ও তত্ত্বাবধান করে থাকেন। স্বাধীন, সাংবিধানিক সংস্থা বিচার বিভাগের প্রধান হিসেবে প্রধান বিচারপতি পদটি সম্পূর্ণ নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ। তাছাড়া তিনি (প্রধান বিচারপতি) সংবিধানের অভিভাবক। সুতরাং, রাষ্ট্রপতিকে শপথ পড়ানোর জন্য প্রধান বিচারপতি পদটিই সবচেয়ে ভালো পদ। রিটে বলা হয়েছে, সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়া সত্ত্বেও, চতুর্থ সংশোধনী এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধানটি উদ্দেশ্যমূলকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতির পদের ক্ষমতা, মর্যাদাকে ক্ষুণ্ণ করা এবং রাষ্ট্রপতির ওপর পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর আগে প্রধান বিচারপতিকে শপথ পাঠ করাতেন রাষ্ট্রপতি আর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাতেন প্রধান বিচারপতি।
চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির শপথ পাঠ করানোর বিধানে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করান জাতীয় সংসদের স্পিকার। পরে পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এই বিধান বাতিল করে দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করাবেন স্পিকার, সেই বিধান ফিরিয়ে আনা হয়। যেহেতু সম্প্রতি সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী কিছু অংশ বাতিল করা হয়েছে, তাই রাষ্ট্রপতিকে শপথ পাঠ করানোর বিদ্যমান বিধানটিও বাতিল করা হোক।