সোমবার সচিবালয়ে কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশি শর্টফিল্ম ‘আলী’র প্রদর্শনীর আমন্ত্রণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন অংশ নেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক সাংবাদিক বিবিসি বাংলাকে জানান, সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে সাংবাদিকরা সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টার কাছে সাম্প্রতিক নানা ইস্যুতে প্রশ্ন করেন। সেখানে এক পর্যায়ে চ্যানেল চ্যানেল আইয়ের সাংবাদিক রফিকুল বাসার পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মোটিফ প্রসঙ্গ তুলে সংস্কৃতি উপদেষ্টার কাছে জানতে চান, চারুকলায় পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মোটিফ প্রদর্শন করার বিষয়টি কি ঠিক হয়েছে? নাকি এতে সমস্যা আরো দীর্ঘায়িত হলো কি না এবং সংস্কৃতি উপদেষ্টা ব্যক্তিগতভাবে বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
তখন পাল্টা প্রশ্ন করে সাংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “এবার নববর্ষের থিম কী ছিল”? তখন আরেক সাংবাদিক উত্তর দেন, নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান। তখন সাংবাদিক মি. বাসার পাল্টা প্রশ্ন করেন, “আমরা কি সুন্দর জায়গাতে গেলাম নাকি আরো অসুন্দরকে আরো দীর্ঘায়িত করলাম? আপনার ব্যক্তিগত মতামত কী?”
জবাবে উপদেষ্টা মি. ফারুকী বলেন, “মোটিফ কী ব্যবহার করবে এটা চারুকলা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত। আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলছি। সেটা হচ্ছে, এই যে আপনি ফ্যাসিবাদের… দেখুন, যখন আমরা জাতীয় ঐক্যের কথা বলি, তখন জাতীয় ঐক্যের কথার মধ্যে কি আমরা, ধরেন, যে মানুষ ১৪শ মানুষ খুন করেছেন জুলাইতে, তার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে, তার বিচার, অনুশোচনা, ক্ষমা কোনো কিছুই ঘটেনি, আপনি কি আমাকে বলছেন তার সঙ্গে এখন জাতীয় ঐক্য করবার জন্য? আই থিংক দিস ইজ অ্যাবসার্ড।”
বাসার আবার জানতে চান, ‘এটা নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমি বলেছি যে, সেই সমস্যাটা কি জিইয়ে থাকল, না কি সমাধান হল?”
তখন উপদেষ্টা ফারুকী বলেন, ”বিচার… প্রথম কথা হচ্ছে, আমার যেটা উত্তর দেওয়ার, পরিষ্কার করে দিয়েছি। ১৪শ মানুষ যারা খুন করেছে, তাদের বিচারপ্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত, বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত, ইউ ক্যাননট এক্সপেক্ট, এ কাইন্ড অব রিকনসিলিয়েশন প্রসেস টু স্টার্ট। দ্যাট ইজ এ ভেরি সিম্পল থিং। পৃথিবীর কোথাও এটা ঘটে না। এটা হচ্ছে, সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার উপলব্ধি। রিগার্ডিং দ্য মোটিফ, দ্যাটস নট মাই জব। এটা হচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কী করবে।”
এই সময় এটিএন বাংলার সাংবাদিক ফজলে রাব্বী জানতে চান, ”আপনি যে ১৪শ মানুষ নিহতের… অবশ্যই যখন এই ১৪শ সংখ্যাটাতো আর একটা, আপনার কাছ থেকে, যারা পলিটিক্যাল রেটরিক বলছে, তারা ১৪শ বলবে…” উত্তরে ফারুকি বলেন,. ”আই এম টকিং অ্যাবাউট ইউনাইটেড নেশনস রিপোর্ট। ভাই, প্লিজ ডু সাম রিসার্চ। প্লিজ ডু ইউর ওন রিসার্চ। চেক।
এক পর্যায়ে দীপ্ত টিভির রিপোর্টার মিজানুর রহমান উপদেষ্টা মি. ফারুকীর কাছে প্রশ্ন করেন, “জুলাই আন্দোলনে নিহতের সংখ্যা ১৪০০ আপনি কীভাবে বলেন? এটাতো কোর্ট বলবে, কোর্ট ভারডিক্ট করবে। আপনি একটা বায়াসড উত্তর কীভাবে দেন।”
জবাবে উপদেষ্টা পাল্টা প্রশ্ন করেন, “৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনার মতো একজন সাংবাদিক যদি এসে বলতেন, কী করে আপনি বলছেন এত লোককে পাকিস্তানিরা মেরেছে। কোর্ট তো ভার্ডিক্ট দেয়নি এখনো। দিস এই অ্যাবসার্ড। ডোন্ট সে দিস”।
এ নিয়ে তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে ফজলে রাব্বী জানতে চান, ”এই প্রশ্নে আমরা ৭১ নিয়ে আসছি, এটার সাথে একাত্তরের কী সম্পর্ক?”
তখন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ”দেয়ার ইজ এ রিজন, দেয়ার ইজ এ রিজন, শেষ করি। আপনি যেমন এখন প্রশ্ন করছেন, ১৯৭২ সালে এই রকম একটা প্রেস মিটে একজন সাংবাদিক যদি বসে এই প্রশ্নটা করতেন- যেমন- ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিমন্ত্রী যিনি ছিলেন, আমি জানি না কে ছিলেন, উনাকে যদি প্রশ্ন করতেন, আচ্ছা এই যে আপনারা যে বারবার বলছেন, খুনি পাকিস্তানি, খুনি পাকিস্তানি, এটাতো এখন কোর্ট প্রমাণ করেনি, কেন বলছেন খুনি পাকিস্তানি? এই প্রশ্নটা কেমন দেখাবে?”
সংবাদ সম্মেলনে আরো দুয়েকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন। সেখানে অভিনেতা ইরেশ জাকেরের বিরুদ্ধে জুলাই আন্দোলনের ঘটনায় মামলা নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। সেসবের জবাব দেন উপদেষ্টা। তথ্যসূত্র- বিবিসি বাংলা