মানবদেহে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণার উপস্থিতি নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ক্ষুদ্র কণা রক্ত, লালা, কফ, স্তন্যদুধ এমনকি হাড় ও মস্তিষ্কেও পাওয়া যাচ্ছে। সাম্প্রতিক একাধিক গবেষণায় এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে জানা যায়, ইংল্যান্ডের রথামস্টেড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সংরক্ষিত মাটি ও ফসলের নমুনায়ও মাইক্রোপ্লাস্টিক শনাক্ত হয়েছে। গবেষক অ্যান্ডি ম্যাকডোনাল্ড জানান, ১৯৬০ সালের পর থেকে এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে—যার জন্য দায়ী প্লাস্টিক ব্যবহারের ব্যাপকতা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, একজন মানুষ বছরে গড়ে প্রায় ৫২,০০০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করেন, যা খাবার, পানি ও বাতাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে। ২০২৪ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের তুলনায় মাইক্রোপ্লাস্টিক গ্রহণের হার ছয় গুণ বেড়েছে।
২০২৫ সালের একটি পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে দেখা যায়, টি-ব্যাগ বা প্লাস্টিক পাত্রে গরম খাবার গ্রহণের মাধ্যমে মাইক্রোকণা শরীরে প্রবেশ করে। গবেষণার প্রধান স্টেফানি রাইট জানান, সবচেয়ে ক্ষুদ্র কণাগুলো রক্তে প্রবেশ করে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
চীনের এক গবেষণায় হাড় ও পেশির মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এটি শরীরচর্চা বা দৈহিক কর্মক্ষমতা কমিয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতালির গবেষণায় ধমনির প্লাকে এই কণা শনাক্ত হয়—যা হৃদরোগ, স্ট্রোক ও আকস্মিক মৃত্যুর ঝুঁকি ৪.৫ গুণ বাড়িয়ে দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকরা ২০২৫ সালে মৃতদেহের মস্তিষ্কে মাইক্রোপ্লাস্টিক খুঁজে পান। ডিমেনশিয়া আক্রান্তদের মস্তিষ্কে এর পরিমাণ ১০ গুণ বেশি ছিল। যদিও গবেষকরা এখনই বলছেন না যে এই কণাই এসব রোগের সরাসরি কারণ, তবে অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকির সঙ্গে মিলেই এটি ভয়াবহ পরিণতি ঘটাতে পারে।
এক লিটার বোতলজাত পানিতে প্রায় ২,৪০,০০০ কণা থাকতে পারে—যার মধ্যে কয়েক ধরনের প্লাস্টিক থাকে। কিছু প্লাস্টিক বিষাক্ত রাসায়নিক শোষণ করে এবং শরীরে প্রবেশ করায়। কিছু আবার অ্যান্টিমাইক্রোবায়াল রেজিস্ট্যান্স জিন বহন করে, যা ওষুধ প্রতিরোধী জীবাণু তৈরি করতে পারে।
অস্ট্রিয়ার গবেষক ভেরেনা পিচলারের মতে, ন্যানোপ্লাস্টিক কোষের ভেতরে ঢুকে DNA ক্ষতি করতে পারে এবং দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
শেষ পর্যন্ত গবেষকরা চাইছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের নিরাপদ মাত্রা নির্ধারণ করে উৎপাদনকারীদের সচেতন করতে। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই নীরব দূষণের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা করা সম্ভব হতে পারে।