টাঙ্গাইলের মধুপুর শালবনে হারানো জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনতে শুরু হয়েছে নতুন অধ্যায়। বন বিভাগের উদ্যোগে অবমুক্ত করা ময়ুর থেকে ইতোমধ্যে ডিম ও বাচ্চা পাওয়া গেছে। এতে করে এ অঞ্চলের হারানো প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ফেরানোর সম্ভাবনা জাগছে।
সম্প্রতি মধুপুর জাতীয় উদ্যানে গিয়ে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের পাশে গড়ে ওঠা শালবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এখনো চোখে পড়ে। মধুপুর শহর থেকে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই বনাঞ্চল বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক বন হিসেবে পরিচিত।
রসুলপুর সদর রেঞ্জ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৬ হাজার ৬৬৬.৬৫ একর আয়তনের এ রেঞ্জে প্রাকৃতিক শালবন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৫ হাজার একরে। এছাড়াও রয়েছে সামাজিক বনায়নে ১,৭১২ একর, বিমান বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ ৩০৫.৪০ একর, রাবার প্রকল্পে ৭০৮ একর এবং জবরদখল হওয়া জমি ৩,২৩২.৮৯ একর।
ময়ুর ও কচ্ছপ অবমুক্তকরণ: ২৫ মে, লহুরিয়া হরিণ প্রজনন কেন্দ্রের নেটঘেরা এলাকায় ২০টি ময়ুর ও ৫৪টি কচ্ছপ অবমুক্ত করা হয়। দুই মাসের মাথায় ময়ুর ডিম দিতে শুরু করেছে এবং দুটি বাচ্চাও ফুটেছে। আরও ছয়টি ডিম ইনকিউবেশনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন।
প্রতিদিন ময়ুরগুলোর যত্ন নিচ্ছে ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স। খাঁচায় থাকা ১০ হাজার বর্গফুট এলাকায় ময়ুরগুলোকে আম, গাজর, মুরগির ফিড, পিঁপড়ার ডিমসহ পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হচ্ছে।
আশা ও চ্যালেঞ্জ: স্থানীয় বাসিন্দারা মনে করেন, শালবন পুনরুদ্ধারের এ প্রকল্প টেকসই হলে হারিয়ে যাওয়া বনজ প্রাণী যেমন ময়ুর, শজারু, বনমোরগ, হনুমান, এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী ও পাখিরা আবার ফিরে আসবে। তবে সামাজিক বনায়নে শালগজারি গাছ রোপণ এবং বন রক্ষায় স্থানীয়দের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ।
স্থানীয়রা আরও বলেন, বাণিজ্যিক চাষাবাদে রাসায়নিকের ব্যবহার বাড়ছে যা বনজ জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হতে পারে। তাই পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা: মধুপুর শালবনে ময়ুরের বাচ্চা ফুটে উঠা শুধুই একটি সূচনা। এই উদ্যোগ সফল হলে প্রকৃতি ফিরে পাবে তার হারানো রূপ, আর বাংলাদেশ পাবে একটি সবুজ, প্রাণবন্ত বনাঞ্চল।