ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত দুটি সাধারণ রোগ। উপসর্গ প্রায় মিল থাকলেও ব্যথার ধরন ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিছু পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডা. এ কে এম মূসা, অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
ডেঙ্গু জ্বরে শরীরে হঠাৎ জ্বরের সঙ্গে মাংসপেশি ও অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা দেখা যায়। এ ব্যথাকে সাধারণভাবে ‘হাড়ভাঙা ব্যথা’ বলা হয়ে থাকে।
সাধারণ লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে: তীব্র জ্বর (১০১–১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট), মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, বমি বমি ভাব বা বমি, শরীরে ফুসকুড়ি এবং গিঁটে ব্যথা।
ডেঙ্গু হলে পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে, প্রচুর তরল পান করতে হবে এবং জ্বর কমাতে শুধুমাত্র প্যারাসিটামল খেতে হবে। নাড়ি ও রক্তচাপ মনিটর করতে হবে এবং প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হতে পারে। সময়মতো চিকিৎসা না করলে ডেঙ্গু হেমোরেজিক ফিভার বা শক সিন্ড্রোম হতে পারে। তবে ডেঙ্গু সেরে গেলে সাধারণত গিঁটে আর ব্যথা থাকে না।
অন্যদিকে, ‘চিকুনগুনিয়া’ শব্দটির অর্থই হচ্ছে ‘বাঁকা হয়ে যাওয়া’। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ও মাংসপেশিতে তীব্র ব্যথা হয়, যা অনেক সময় চলাফেরা কঠিন করে তোলে। চিকুনগুনিয়ার উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে: প্রচণ্ড জ্বর, মাথাব্যথা, দুর্বলতা, বমি বমি ভাব, শরীরে লাল র্যাশ, অস্থিসন্ধি ও মেরুদণ্ডে তীব্র ব্যথা এবং হাত-পা ফুলে যাওয়া।
এই রোগ সাধারণত উপসর্গ দেখেই শনাক্ত করা যায়। রক্তে সিবিসি এবং ৫-৭ দিন পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে নিশ্চিত হওয়া যায়। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আরোগ্য লাভ করেন। তবে ১০ শতাংশের কম রোগী জ্বর সেরে যাওয়ার পরও জয়েন্ট ও পেশিতে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথায় ভোগেন। কেউ কেউ কয়েক মাস বা বছরেরও বেশি সময় ধরে এই ব্যথায় কষ্ট পেতে পারেন।
চিকুনগুনিয়া আর্থ্রাইটিস হলে শুরুতে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা করতে হয়। বিশ্রাম, পর্যাপ্ত তরল পান, ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ও ঠান্ডা সেঁক সহায়ক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হতে পারে।
যদি ব্যথা তিন মাসের বেশি স্থায়ী হয়, তাহলে তাকে ক্রনিক আর্থ্রাইটিস বলা হয়। এ অবস্থায় রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো চিকিৎসা দরকার হতে পারে। চিকিৎসকের পরামর্শে প্যারাসিটামল, আইবি প্রফেন, ক্লোফেনাক, শর্ট কোর্স স্টেরয়েড, মিথোট্রেক্সেট এবং অন্যান্য প্রদাহরোধী ওষুধ ব্যবহার করা হতে পারে।
ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে জয়েন্টের কার্যকারিতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব। ব্যায়াম ও নির্দিষ্ট থেরাপির মাধ্যমে ব্যথা ও চলাফেরার সমস্যাও কমানো যায়।
ভাইরাল জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলেই দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নেওয়া উচিত। বিশেষ করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা থেকে মুক্ত থাকতে সময়মতো সঠিক চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।