টাঙ্গাইলে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিপাকে পড়েছে সাধারণ ব্যবসায়ী, পথচারী ও নিম্নআয়ের মানুষ। শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি শনিবার (১ নভেম্বর) পর্যন্ত মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলা বিভিন্ন শহরের সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। শহরের অনেক এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে রিকশা ও ভ্যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষকে ভিজে কষ্টে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। এদিকে বৃষ্টিতে কৃষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। জেলার বিভিন্ন মাঠে শীতকালীন শাকসবজি ও সরিষা আবাদে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন অনেকে। তারা বলছেন, বৃষ্টি ফসলের জন্য আশীর্বাদ হলেও এই সময়ে টানা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি থাকে।
টাঙ্গাইল আবহাওয়া অফিস সূত্র জানায়, ভারতের উত্তর ছত্তিশগড় ও আশপাশের এলাকায় সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এক বিশেষ সতর্কবার্তায় আবহাওয়া অধিদপ্তর বলেছে, শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। “দক্ষিণ ছত্তিশগড় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে উত্তর ছত্তিশগড় ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে আগ্রসর হয়ে লঘুচাপে পরিণত হতে পারে।” এর প্রভাবে আগামী ২৪ ঘণ্টায় টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ হতে পারে। এই সময়ে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
টানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন শ্রমজীবী, দিনমজুর ও দৈনন্দিন কাজে বাইরে বের হওয়া মানুষ। দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। পাখি ও প্রাণিরাও পড়েছে মহাসঙ্কটে। বৃষ্টির কারণে কর্মহীন দুর্ভোগের কথা জানিয়েছেন বাজারের শ্রমজীবীরা। রিকশাচালক আবু মুসা বলেন, মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ার কারণে লোকজন ঘরের বাইরে আসে না, তাই পলিথিন মুড়ি দিয়ে বসে থাকা ছাড়া কোনো কাজ নেই।
পেয়ারা ব্যবসায়ী বলেন, প্রতিদিন দুই মণ পেয়ারা বিক্রি করি। আজকে বৃষ্টির জন্য একমণ এনেছি। তবুও বিক্রি হচ্ছে না। মনে হচ্ছে বাসায় ফেরত নিয়ে যেতে হবে। এভাবে গতকালও ৬০০ টাকা লোকসান হয়েছে। রিকশাচালক আলি মিয়া বলেন, রিকশা চালিয়ে বাড়ির বাজার করি। কিন্তু আজকে বৃষ্টিতে সেভাবে রিকশা নিয়ে বের হতে পারছি না। আয় নেই। প্রতিদিন ৭০০-৮০০ টাকা আয় করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আজকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ৭০ টাকা আয় হয়েছে।
টাঙ্গাইল পৌর শহরের ভালুককান্দি এলাকার বাসিন্দা ইমাম হোসেন বলেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঘর থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না। অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি। কারণ আমার বাড়ির সামনে পানি জমে যায়। পৌর কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলেনও ব্যবস্থা হয়নি। বাজারে কথা হয় কাঠমিস্ত্রি পরিমল সুত্রধরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভোরে বাড়ি থেকে বের হয়ে বাজারের একটি ঘরে আটকে আছেন। বৃষ্টির কারণে আজ আর কাজে যাওয়া হয়নি। দিন হাজিরা হিসেবে তাঁরা ৫০০ টাকা করে আয় করেন। এভাবে বসে থাকা মানেই ক্ষতি।
বৃষ্টির কারণে সকালে অনেক এলাকায় পত্রিকা বিলি করতে পারেননি হকাররা। পত্রিকার তিনজন পাঠক মুঠোফোনে জানান, সকালে পত্রিকা না পড়লে ভালো লাগে না। বেলা গড়িয়ে গেলেও এখনও পত্রিকা হাতে পাইনি। পত্রিকার হকার শামীম আল মামুন বলেন, ভোরে পলিথিনে মুড়িয়ে পত্রিকা নিয়ে বের হয়েও ভারী বৃষ্টির কারণে এখনও সব বিলি করতে পারিনি।
বৃষ্টির কারণে গরু ছাগল ও হাঁস-মুরগির বাজারেও আমদানি ও বেচাকেনা একবারেই কম। বৃষ্টিতে বিক্রি কমে যাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন বাজারের ব্যবসায়ীরা। রেইনকোর্ট পড়ে ছাতা মুড়ি দিয়ে কাঁচাবাজারে আসা ফারুক হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে দোকানপাট খুলেছে কম। এরা প্রতিটি জিনিসের দামই বেশি বলছে। কৃষক মোস্তাক হোসেন বলেন, এই বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতি হবে সবজি কৃষকদের। শীতকালীন সবজির সময় এখন। আর এই সময়ে এই বৃষ্টি মারাত্মক ক্ষতি করবে তাদের।











